in

বিয়ের সময় অনুপমের বয়স কত ছিল?

অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে দেওয়াটাকে অনুপমের মামা ঠাট্টা মনে করলে শম্ভুনাথ সেন একথা বলেছিলেন। অনুপমের মামা বিয়ের আগেই সেকরা দিয়ে কনের গায়ের গয়না যাচাই করে দেখেতে চান তা আসল কি না। এ কারণে শম্ভুনাথ সেন অপমানিত বোধ করেন। গয়না যাচাইয়ের ব্যাপারে পাত্রের নির্লিপ্ততা দেখে তিনি এমন ব্যক্তিত্বহীন ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাই তিনি পাত্রপক্ষকে যথাযথ আপ্যায়নের পর গাড়ি ডেকে বিদায় নিতে চাইলে অনুপমের মামা এ বিষয়টি ঠাট্টা মনে করেন। এর জবাবে তিনি বলেন – ‘ঠাট্রার সম্পর্ককে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই।’
দা গল্পে কল্যাণীর প্রতি অনুপমের গভীর আকর্ষণ প্রকাশ পেয়েছে; যা তাকে ও উদ্দীপকের ডাক্তার অপূর্বকে সাদৃশ্য এনে দিয়েছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে ঠিক হয়। কল্যাণীকে | না দেখেই তার প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় অনুপমের মনে। অনুপমের মামা বিয়ের আসরে সেকরা দিয়ে কনের গয়না পরীক্ষা করে দেখেন। এ কারণে অপমানিত হয়ে কল্যাণীর বাবা অনুপমের সাথে মেয়ে বিয়ে না দিয়েই বরযাত্রী বিদায় করেন।

বিয়ে ভেঙে গেলেও অনুপম কল্যাণীকে ভুলতে পারেনি। অন্যদিকে, কল্যাণী মেয়েদের উন্নয়নে সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত হয়। মাকে নিয়ে তীর্থে যাওয়ার পথে ট্রেনে কল্যাণীকে দেখে অনুপমের তাকে স্বাধীনচেতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী বলে মনে হয়। উদ্দীপকের ডাক্তার অপূর্ব বাসস্টপেজে একটি স্কুলবাস দেখেন। সেই বাসের একজন শিক্ষিকাকে তার চেনা মনে হলো। তিনি ভাবতে লাগলেন, এমন একজনের সাথেই তার বিয়ের কথা হয়েছিল।

অপূর্বের কৌতূহলী মনকে বেশি কিছু ভাবার সুযোগ না দিয়েই বাসটি চলে যায়। কিন্তু বাসের ওই শিক্ষিকাকে তার স্বাধীনচেতা ও ব্যক্তিত্বময়ী বলে মনে হয় যা গল্পের অনুপমের ভাবনার অনুরূপ। গল্পের কল্যাণীর প্রতি অনুপমের যে আকর্ষণ লক্ষ করা যায় উদ্দীপকের ডাক্তার অপূর্বের মাঝেও তা লক্ষণীয়। আর এই অনুরূপ মনোভাব প্রকাশের দিকটিই তাদের দুইজনকে সাদৃশ্যপূর্ণ করেছে।

ঘ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর চরিত্রে বেশ কিছু উন্নত মানবিক প্রবণতা প্রতিফলিত হয়েছে; যেগুলোর সমগ্রতা উদ্দীপকের শিক্ষিকার মাঝে দেখা যায় না।

‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী দৃঢ়চেতা মনোভাবাপন্ন ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন নারী। বিয়ের আসরে বিয়ে ভেঙে গেলেও সে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েনি। নিজেকে সে দেশের কল্যাণে, নারীদের উন্নয়নে সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত করে। তৎকালীন সমাজবাস্তবতার বিরূপ পরিবেশে কল্যাণী সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।
উদ্দীপকে আমরা ডাক্তার অপূর্বের স্কুলবাসে হঠাৎ দেখা এক শিক্ষিকার সাথে পরিচিত হই।

তাকে ঘিরে অপূর্বের মনে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। শিক্ষিকার প্রতি অপূর্বের আকর্ষণ সৃষ্টির পাশাপাশি উদ্দীপকের সেই শিক্ষিকার স্বাধীনচেতা ও ব্যক্তিত্বময়ী চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীকে আমরা উদার, পরোপকারী, স্বাধীনচেতা ও ব্যক্তিত্বময়ী নারী হিসেবে দেখতে পাই। সে তার বাবা ও নিজের সম্মান বজায় রাখতে অনুপমকে বিয়ে করেনি। অনুপম দ্বিতীয়বার পাণিপ্রার্থী হলে তার বাবা মেনে নেন কিন্তু নারীশিক্ষা বিকাশে দেশের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কল্যাণী তা প্রত্যাখ্যান করে।

উদ্দীপকে ডাক্তার অপূর্বের সাথে স্কুল শিক্ষিকার বিয়ে হওয়ার কথা থাকলেও সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনা নেই। সেই শিক্ষিকার পরিচয়ও উদ্দীপকে আলোচনা করা হয়নি। অপরদিকে গল্পে কল্যাণী চরিত্রকে দেশসেবায় নিয়োজিত হওয়া এবং তাতেই সংকল্পবদ্ধ থাকার মাধ্যমে পূর্ণতা দেওয়া হয়েছে। তাই আমি মনে করি, উদ্দীপকের শিক্ষিকার মধ্যে ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর চারিত্রিক প্রবণতাসমূহ আংশিক প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৮ ‘কন্যার পিতা রামসুন্দর আমাদের রায় বাহাদুরের হাতে পায়ে ধরিয়া বলিলেন, “শুভ কার্য সম্পন্ন হইয়া যাক, আমি নিশ্চয়ই টাকাটা শোধ করিয়া দিব।” রায় বাহাদুর বললেন, “টাকা হাতে না পাইলে বর সভাস্থ করা যাইবে না।” এই দুর্ঘটনায় অন্তঃপুরে একটা কান্না পড়িয়া
ইতোমধ্যে একটি সুবিধা হইল। বর সহসা তার পিতৃদেবের অবাধ্য হইয়া উঠিল। সে বাবাকে বলিয়া বসিল, “কেনাবেচা নরদামের কথা আমি বুঝি না; বিবাহ করিতে আসিয়াছি, বিবাহ করিয়া যাইব।” মি. বো. ১৬৪ প্রশ্ন নম্বর-

ক. বিয়ের সময় অনুপমের বয়স কত ছিল?
খ. ‘অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোটো ভাইটি।’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের বরের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম চরিত্রের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো। ঘ. “উদ্দীপকের ঘটনাটি ‘অপরিচিতা’ গল্পে বর্ণিত সামাজিক অসংগতির দিকটি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
8
৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
বিয়ের সময় অনুপমের বয়স ছিল তেইশ বছর।
| সৃজনশীল প্রশ্নের ১ (খ) নম্বর উত্তর দ্রষ্টব্য।
| ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম তার মা ও মাতুলের আজ্ঞাবহ থেকে

নিজের ব্যক্তিত্ববোধের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়নি। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপম উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও ব্যক্তিত্বহীন, পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুলমাত্র। তাকে দেখলে আজও মনে হয়, যেন মায়ের কোলসংলগ্ন শিশু । মামার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্ত সে দিতে পারে না। এমনকি তার মামার অপমানের কারণে ও তার ব্যক্তিত্বহীনতায় কন্যার পিতা বিয়ের আসর থেকে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

যদিও গল্পের শেষ দিকে অনুপমের চরিত্র ক্রমশ ইতিবাচক হয়ে উঠেছে কিন্তু শুরুতেই তার চরিত্র সম্পর্কে পাঠকমনে এক নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। উদ্দীপকের বর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক পুরুষ। তার পিতা যখন যৌতুকের সমগ্র টাকা না পেলে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন, তখন সে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত স্বার্থহীন কণ্ঠে জানায়। পিতার অবাধ্য হয়ে সে কেনাবেচা দরদামের কথা ভেবে বিয়ে করবে না বলে জানায়। পরিবারতন্ত্রের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাই উদ্দীপকের বরকে গল্পের অনুপম থেকে ভিন্ন করে তুলেছে।

‘অপরিচিতা’ গল্পে সামাজিক অভিশাপ হিসেবে চিহ্নিত যৌতুক প্রথার মন্দ দিকটি ফুটে উঠেছে।
‘অপরিচিতা’ গল্পে যৌতুক প্রথার সামাজিক অসংগতি চিহ্নিত করা হয়েছে। যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিতি প্রতিরোধের চিত্র এখানে ফুটে উঠেছে। সমগ্র ঘটনার কেন্দ্রে আছে এই সামাজিক অসংগতি। অনুপমের মামা বিয়ের আগে কল্যাণীর গহনা পরীক্ষা করা নিয়ে যে নীচতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতেই সমাজের যৌতুক প্রথার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

উদ্দীপকে যৌতুক প্রথার অসংগতি বর্ণিত হয়েছে। বিয়ের দিনে সমগ্র টাকা না পেলে ছেলেকে বিয়ের আসরে বসতে না দেওয়ার হুমকি দেন রায় বাহাদুর। যদিও কন্যার পিতা রায় বাহাদুরের কাছে অনুরোধ করেন, ‘শুভ কার্য সম্পন্ন হয়ে গেলে ধীরে ধীরে তিনি বাকি টাকাটা শোধ করে দিবেন’ কিন্তু যৌতুক প্রথার কুপ্রভাবের ফলস্বরূপ রায় বাহাদুর তা মানেননি। ‘অপরিচিতা’ গল্পেও বিশেষত অনুপমের মামার আচরণে এ বিষয়টি ঔজ্জ্বল্য পেয়েছে।

উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্প উভয়ক্ষেত্রেই যৌতুক প্রথার নির্মমতা উন্মোচিত হয়েছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের নিস্পৃহ মনোভাব তার মামার যৌতুক নিয়ে বাড়াবাড়ির দিকটিকে প্রশ্রয় দেয়। তেমনি উদ্দীপকেও রায় বাহাদুরের যৌতুকলোভী মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। তাই বলা যায়, প্রশ্নোল্লেখিত মন্তব্যটি যথার্থ।

What do you think?

Written by Selfish World

Leave a Reply

কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য কাকে পাঠা?

‘কন্সটি’ শব্দের অর্থ কী?