in

‘বিড়াল’ রচনায় সাম্যবাদবিমুখ, ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষে শোষক-শোষিত

ধনী-দরিদ্র, সাধু-চোরের মধ্যে বৈষম্য ও সংগ্রামের কথা উচ্চকিত হয়েছে বিড়ালের কণ্ঠে। সেখানে লেখক আত্মোপলব্ধি থেকে সমাজের অরাজকতার জন্যে দরিদ্রের তুলনায় কৃপণ ধনীকেই দোষী করেছেন। সোশিয়ালিস্টিক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে বিড়াল সমাজে ধনসাম্য প্রত্যাশা করেছে। বিড়ালের মতে, সমাজের ধনবৃদ্ধি মানে ধনীর ধনবৃদ্ধি। এর পাশাপাশি বিড়াল পরোপকারের মহত্ত্ব কীর্তন করতেও ভোলেনি। অর্থাৎ ‘বিড়াল’ রচনায় যেখানে সমাজের বিবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেখানে উদ্দীপকে কেবল পরোপকারের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। সেদিক বিবেচনায়

“উদ্দীপকটির ভাবের সাথে ‘বিড়াল’ রচনার আংশিক দিক প্রতিফলিত হয়েছে”– মন্তব্যটি যথাযথ।
প্রশ্ন ৮ হাজী মুহম্মদ মুহসীন এক রাতে তাঁর শয়নকক্ষে এক চোরকে কিছু মালসহ ধরে ফেললেন। তিনি চোরকে শান্তি না দিয়ে চুরির কারণ জিজ্ঞেস করলেন। চোর তার সংসারের অভাব-অনটনের কথা তুলে ধরল। হাজী মুহম্মদ মুহসীন ওই চোরকে নগদ অর্থ ও খাবার দিয়ে বিদায় করলেন। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, টাঙ্গাইল। প্রশ্ন নম্বর-১/

ক. কমলাকান্ত বিড়ালকে কার লেখা বই উপহার দিতে চেয়েছিল? ১ খ. ধনীর দোষেই দরিদ্র চোর হয় – উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে ‘বিড়াল’ রচনার সাদৃশ্য অথবা বৈসাদৃশ্য নির্ণয় কর। ঘ. উদ্দীপকের হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মতো মানুষ থাকলে সমাজে
কাউকে আর চুরি করতে হতো না’ – কথাটি বিশ্লেষণ করো।


কমলাকান্ত বিড়ালকে নিউমান ও পার্করের লেখা গ্রন্থ উপহার দিতে
চেয়েছিল।

মা ধনীর কৃপণতার জন্যই দরিদ্র চোরে পরিণত হয়। একজন মানুষ কেন চোর হয় তা ‘বিড়াল’ রচনায় যুক্তিসংগত বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে ধনী দরিদ্রকে বঞ্চিত করে সম্পদ সংগ্রহ করে। তাই বেঁচে থাকার জন্য দরিদ্র খাদ্য চুরি করতে বাধ্য হয়। তাই দরিদ্র চুরি করলেও চুরির মূল কারণ কৃপণের মাত্রাতিরিক্ত ধন সঞ্চয়।

উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে ‘বিড়াল’ রচনার মার্জারের বক্তব্যের
সাদৃশ্য রয়েছে। ‘বিড়াল’ রচনায় প্রতীকী চরিত্র বিড়ালের ভাষ্যে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ বর্ণিত হয়েছে। তার মতে, ধনীরা পাঁচশ জনের আহার একা সংগ্রহ করায় এবং তাদের উদ্বৃত্ত সম্পদ বণ্টন করে না দেওয়ায় দরিদ্ররা চুরি করতে বাধ্য হয়। এছাড়া বিড়াল তার শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে যা বলেছে তাতে দরিদ্রের বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকে হাজী মুহম্মদ মুহসিনের জীবনের একটি কাহিনি চিত্রিত হয়েছে। তিনি এক রাতে এক চোরকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। কিন্তু মহানুভব মুহসীন চুরির জন্য চোরকে কোনো শাস্তি প্রদান করেন না। বরং চৌর্যবৃত্তির কারণ জানতে চান চোরের কাছে। চোর বলে অভাবের তাড়নায় সে চুরি করতে বাধ্য হয়। ‘বিড়াল’ রচনায়ও চুরির পেছনে অভাবের দিকটি ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিই মানুষকে অপরাধকর্মে প্রবৃত্ত করে। আর এ দিক থেকেই,

ঘ উদ্দীপকের হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মতো মানুষ থাকলে সমাজে কাউকে আর চুরি করতে হতো না কথাটি যথার্থ। ‘বিড়াল’ রচনায় কমলাকান্ত ও বিড়ালের মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে তিনি চুরির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ধনীর কৃপণতাকে। এছাড়া সভ্য সমাজের উদাসীনতাকেও দায়ী
করেছেন চুরির জন্য।

উদ্দীপকে হাজী মুহম্মদ মুহসীনের বদান্যতা প্রকাশ পেয়েছে। নিজ ঘরের মধ্যে চোরকে হাতেনাতে ধরে তাকে শাস্তি না দিয়ে সহায়তা করেন। তিরস্কার না করে তাকে সাহায্য করেন। চোরকে দণ্ডের বদলে নগদ অর্থ ও খাবার দেওয়ার এমন দৃষ্টান্ত শুধু মুহসীনের মতো মানুষদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালের কল্পিত জবানের মধ্য দিয়ে চুরির জন্য দায়ী করা হয়েছে ধনী কৃপণদের। কিন্তু উদ্দীপকের হাজী মুহম্মদ মুহসীনের কর্মকাণ্ড এর বিপরীত। ‘বিড়াল’ রচনায় বলা হয়েছে এ বিশ্বের অনেক বড় বড় সাধু, চোরের নামে যারা শিউরে ওঠেন, তারা অনেকেই চোর অপেক্ষাও অসৎ। কেননা তাদের প্রচুর ধন থাকলেও তারা দরিদ্রদের প্রতি নির্দয়। কিন্তু উদ্দীপকে বর্ণিত চরিত্রটি বিপরীত স্রোতের মানুষ। | তাই বলা যায়, উদ্দীপকের হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মতো মানুষ থাকলে সমাজে কাউকে আর | করতে হতো না— বক্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।

প্রশ্ন ৯ পীর হাত মেলিয়া আখনার সম্মুখে ধরিল। নিটোল সুগঠিত কালো হাতের ওপর সাদা ৰূপার চুড়িগুলো বড় সুন্দর মানাইয়াছিল। আখনা মুগ্ধ হইয়া দেখিতেছিল। সে হাসিয়া বলিল, “দু টাকা বানি দিতে হবে, হ্যাঁ।’ আখনা চমকিয়া উঠিল, বলিল, ‘দু-টা-কা!’ পরী বিস্মিত হইয়া উত্তর দিল, ‘দু টাকা নইলে চুড়ি হয়?’ আখনা বলিল, ‘এখন আমি টাকা কোথা পাব বল দেখি?’ আজ এক কথাতেই পরী ক্ষুদ্ধ হইয়া উঠিল, ‘তোকে দিতে লাগবে না টাকা। আমি গতর খেটে শোধ দেব।’ আখনা বলিল, ‘আচ্ছা আচ্ছা, আমি দেব বানি, আজই দেব।’ সেদিন দ্বিপ্রহরে আখনা মনিবের জনশূন্য বৈঠকখানাটায় প্রবেশ করিয়া সন্তর্পণে রূপাবাঁধানো হুঁকাটা তুলিয়া লইয়া কাপড় ঢাকা দিয়া সরিয়া পড়িল।

পরী চুড়ি পরিল, আখনা চুরি করিল। উিৎস: জলসাঘর প্রতীক্ষা; তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়]
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ। প্রশ্ন নম্বর-৪। ক. নৈয়ায়িক’ শব্দের অর্থ কী?
খ. বিড়াল কেন বলে, ‘দরিদ্রের আহার সংগ্রহের দণ্ড আছে,
ধনীর কার্পণ্যের দণ্ড নাই কেন?’ গ. উদ্দীপকের আখনার সাথে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের বিড়ালের তুলনা করো।
ঘ. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আপনার চুরি সমর্থন করেননি।’— প্রবন্ধের আলোকে মতামতটি যাচাই করো।

‘নৈয়ায়িক’ শব্দের অর্থ ন্যায়শাস্ত্রে পণ্ডিত ব্যক্তি ।

ধনীরা সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখার কারণে দরিদ্র চুরি করতে বাধ্য হয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয় বলেই একথা বলা হয়েছে। ধনী ব্যক্তিরা নির্দয়ের মতো সমস্ত ধনসম্পদ আগলে রাখে অথচ ক্ষুধা- দারিদ্র্যপীড়িত কারো পাশে গিয়ে দাঁড়ায় না। তারা একা অনেক সঞ্চয় করে যার দরুন গরিবকে বাধ্য হয়ে চোর হতে হয়। কিন্তু সমাজে চোরের জন্যে শান্তির বিধান থাকলেও চুরির মূলে দায়ী ধনীদের কোনো শান্তির বিধান নেই বলে একথা বলা হয়েছে।

What do you think?

Written by Selfish World

Leave a Reply

উদ্দীপকের ‘ফসল’ শব্দটি ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে উল্লেখিত ‘ধনবৃদ্ধি’ বিষয়টির সঙ্গে তুলনীয়।

ক. নেপোলিয়নের পুরো নাম কী?