in

বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস কোনটি?

ম খাইতে দাও— নহিলে চুরি করিব বিড়ালের এমন মন্তব্যের কারণ সমাজের ধনীদের দ্বারা পরিবের অধিকার বঞ্চনা । আমাদের সমাজে যারা দরিদ্র, অসহায় তাদের প্রায়শই অনাহারে দিন কাটাতে হয়। অথচ তাদের এই অবস্থা দেখে কেউ সমব্যথী হয় না, তাদের দিকে ফিরে তাকায় না, এমনকি তাদের প্রতি সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দেয় না।

তাই কখনো কখনো তারা চুরির মতো হীন কাজ করতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ ধনীর কৃপণতাই দরিদ্রকে চুরি করতে বাধ্য করে। তাই সমাজের ধনীদের দ্বারা গরিবের এমন অধিকার বঞ্চনাই বিড়াল কর্তৃক আলোচ্য মন্তব্যটির কারণ। বা উদ্দীপকের মুসাফিরের সঙ্গে ‘বিড়াল’ রচনার বিড়াল চরিত্রটির সাদৃশ্য রয়েছে।

‘বিড়াল’ রচনায় বিড়ালের বক্তব্যে ধনিক শ্রেণি কর্তৃক সমাজের দরিদ্রদের বঞ্চনার চিত্র উঠে এসেছে। বিড়াল কমলাকান্তের জন্য রেখে দেওয়া দুধ পান করেছে। কমলাকান্ত এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিড়ালকে মারতে গেলে সে বলে, মানুষেরা তাদের উচ্ছিষ্ট খাবার ক্ষুধার্তকে না দিয়ে নর্দমায় ফেলে দেয়। যারা অসহায় তাদের খোঁজ তারা রাখে না। কিন্তু যারা বিত্তশালী তাদের সামান্য কষ্টেও তারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। অথচ বিড়ালের মতো যারা ক্ষুধার্ত তাদের কেউ খাবার দিতে চায় না।

উদ্দীপকের মুসাফির সাত দিন ধরে অভুক্ত। তিনি মসজিদে গিয়ে মোল্লার কাছে খাবার চাইলে মোল্লা নামাজ না পড়ার অজুহাতে তাকে তাড়িয়ে দেয়। মোল্লা গো-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দেয়। আবার বিড়াল রচনায়ও আমরা ধনীদের কর্তৃক দরিদ্রদের বঞ্চিত করতে দেখি। ধনীর সামান্য কষ্টে তারা ব্যতিব্যস্ত হলেও বিড়ালের মতো যারা ক্ষুধার্ত তাদের কেউ খাবার দিতে চায় না। উদ্দীপকের মোল্লাও তেমনি ক্ষুধার্তকে খাবার দিতে চায়নি। সুতরাং উদ্দীপকের মুসাফির চরিত্রের সঙ্গে ‘বিড়াল’, রচনার বিড়াল চরিত্রটির সাদৃশ্য রয়েছে।

উদ্দীপকটি ‘বিড়াল’ রচনার আংশিক ভাব ধারণ করে বলে আমি মনে করি। “বিড়াল’ প্রবন্ধে রসাত্মক ও ব্যাধর্মী বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক সাম্যবাদের তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন। বিড়াল কমলাকান্তের জন্য রেখে দেওয়া দুধ চুরি করে খায়। বিড়াল এ চুরি সম্পর্কে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যে যুক্তি দেয় তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজের উচ্চ শ্রেণি প্রচুর ভোগ বিলাসের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে। অন্যদিকে গরিব-অসহায়েরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করে। ধনীরা তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না, কিন্তু বিত্তশালীদের জন্য ঠিকই কষ্টবোধ করে। প্রবন্ধের এই বিষয় উদ্দীপকে পরিলক্ষিত হয় না ।

উদ্দীপকের মুসাফির সাত দিন ধরে অভুক্ত। মসজিদে গিয়ে মোল্লার কাছে খাবার চাইলে মোল্লা তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় এবং শিরনির গোশত- রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দেয়। এতে মোল্লার স্বার্থপরতা ও নির্দয়তার দিকটি প্রকাশ পায়। এটি ‘বিড়াল’ রচনার কেবল একটি মাত্র দিক, সার্বিক দিক নয়।

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের মোল্লা ও মুসাফিরের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য ও স্বার্থপরতার দিকটি উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে কমলাকান্ত ও বিড়ালের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যকার শ্রেণিবৈষম্যের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। এই শ্রেণিবৈষম্যের রূপটি কেবল তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে সমগ্র পৃথিবীর শোষক-শোষিতের সম্পর্ক প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকে কেবল মোল্লার স্বার্থপরতা ও নির্দয়তার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে, যা বিড়াল প্রবন্ধের একটিমাত্র দিক। উক্ত বিষয় ছাড়াও প্রবন্ধে আরও অনেক বিষয়, তত্ত্ব ও

প্রশ্ন ১৮ মদন সরকার নিজে অভাবগ্রস্ত থাকলেও অন্যের অভাব মেটানো এবং গরিবদের দুঃখ মোচনের ব্যাপারে তার ভূমিকা ছিল সব সময়ই প্রশংসনীয়। গ্রামের কৃপণ অথচ ধনীর মানসিকতা পরিবর্তনে সে গ্রামের | তরুণদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করল। সমিতির মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামের সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে গরিবদের স্বাবলম্বী করা। ধনী পরিবারগুলো এতে সাড়া না দেওয়ায় গ্রামে চুরির সংখ্যা বেড়ে গেল। সিরকারি কেসি কলে । –

ক. বিড়াল’ রচনায় প্রসন্ন গোয়ালিনীর গরুর নাম কী? কৃপণ
খ. ‘অধর্ম চোরের নহে— চোরে যে চুরি করে, সে অধর্ম ধনীর’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মদন সরকারের কর্মপরিকল্পনা এবং ‘বিড়াল’ নিবন্ধের বিড়ালের বক্তব্য একই তুলনামূলক বিচার করো। ৩ ঘ. তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ-দরিদ্রের ক্ষুধা কেহ বুঝে না’, ‘বিড়াল’ নিবন্ধের এই বক্তব্য উদ্দীপকের আলোকে কতটুকু যুক্তিযুক্ত? ব্যাখ্যা করো।

‘বিড়াল’ রচনায় প্রসন্ন গোয়ালিনীর গরুর নাম ‘মঙ্গলা’। সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে অন্নাভাবে, অর্থাভাবে অনেকে চুরি করতে বাধ্য হয়।

চুরি করা নিঃসন্দেহে একটি অপরাধ। যার জন্য শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু চোরের এই চুরি করার দায় সমাজের কৃপণ ধনীর ওপরও অনেকখানি বর্তায়। দরিদ্র শ্রেণির মানুষরা দিন আন্তে খাদ্যের কষ্টে ভোগে। অঢেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও কৃপণ ধনীরা তাদের অর্থ বা খাদ্য দিয়ে সহায়তা করে না বলে তাদের অনেকেই জীবন বাঁচাতে চুরির পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।

তাই এই চুরির দায়, চোরের সাথে সাথে কৃপণ ধনীর ওপরও বর্তায় বলে গল্পের বিড়ালের অভিমত।
উদ্দীপকে উল্লিখিত মদন সরকারের ব্যর্থ পরিকল্পনার সাথে ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালের বক্তব্যের সাদৃশ্য রয়েছে।
আলোচ্য রচনার বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর বঞ্চিত, নিষ্পেষিত মানুষের ক্ষোভ- প্রতিবাদ-মর্মবেদনা ব্যস্ত হয়েছে। দরিদ্র্যের দুরবস্থা ও কষ্টের কথা ব্যক্ত করেছে বিড়ালটি।

এজন্য সে সমাজের বিত্তবান শ্রেণির মানুষের দায় থাকার কথাও বলেন। কৃপণ ধর্মী মানুষদের অসহযোগিতাই দরিদ্র শ্রেণির চৌর্যবৃত্তিতে জড়ানোর জন্য দায়ী বলে মনে করে বিড়ালটি । উদ্দীপকের মদন সরকার নিজে অভাবগ্রস্ত থাকলেও দরিদ্রের দুঃখ মোচনে ভূমিকা রাখে। গ্রামের কৃপণ ধনীদের মানসিকতা পরিবর্তনে সে তরুণদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করে।

গ্রামের বিত্তবান মানুষদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে পরিবদের স্বাবলম্বী করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু ধনী পরিবারগুলো এতে সাড়া না দিলে গ্রামের দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত মানুষদের অনেকেই চুরি করতে শুরু করে। ধনীর আর্থিক অসহযোগিতার দরুন দরিদ্রের চুরির সাথে জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে। দরিদ্র শ্রেণির প্রতিনিধি বিড়ালটি খাবারের অভাবেই কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ চুরি করে খেতে বাধ্য হয়েছিল।

কৃপণ ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধি কমলাকান্ত যদি বিড়ালের জন্য কিছু খাবার নিজে থেকেই বরাদ্দ রাখত তাহলে বিড়ালকে আর চুরি করতে হতো না। এভাবেই মদন সরকার ও বিড়ালের বক্তব্য সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে আলোচ্য মন্তব্যের ভাবটি ফুটে ওঠেনি। ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালটি সমাজের দরিদ্র, শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেছে। তার কণ্ঠে বর্ণিত হয়েছে বঞ্চিত শ্রেণির দুর্দশার কথা। একইসাথে ফুটে উঠেছে এর পেছনে দায়ী থাকা সেই ধনী শ্রেণির অসহযোগিতার কথা।

What do you think?

Written by Imran Mahmud

Leave a Reply

প্রেক্ষাপটের দিক থেকে উদ্দীপকের আখনা ও ‘বিড়াল’ গল্পের বিড়ালের মাঝে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দুইই রয়েছে।

“বিড়াল” রচনায় নির্দেশিত ধনিকশ্রেণি স্বার্থপর