in

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা

ক. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা প্রথম ১৮৭২ সালে প্রকাশিত হয়। | যার যত ক্ষমতা, সে যদি তত ধন সঞ্চয় করতে না পারে, তাহলে সমাজের ধন বৃদ্ধি হবে না মনে করে কমলাকান্ত আলোচ্য উক্তিটি করেছিল।

বিড়াল’ রচনায় লেখক বিড়ালের সোশিয়ালিস্টিক কথা শুনে অনেকটা পরাজিত মনোভাব নিয়ে বলেন, যদি যার যত ক্ষমতা, সে তত ধন সঞ্চয় করতে না পারে, অথবা সঞ্চয় করে চোরের জ্বালায় নির্বিঘ্নে ভোগ করতে না পারে, তবে কেউ আর ধন সঞ্চয়ে যত্নবান হবে না। তাতে সমাজের ধনবৃদ্ধিও হবে না। মূলত সমাজের ধনিকশ্রেণির পক্ষ সমর্থন করতেই কথাগুলো বলেছিল কমলাকান্ত। উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ রচনার নিপীড়িত-বঞ্চিতদের অধিকার-

সচেতনতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য রয়েছে। এ কারণে ধনীরা দিন দিন সম্পদশালী হচ্ছে আর গরিবরা অধিকার বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বঞ্চিতদের অধিকার সচেতন করে তুলে মানবিক জীবনযাপনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে আলোচ্য উদ্দীপক ও ‘বিড়াল’ রচনায়। উদ্দীপকে নিপীড়িতপ্রাণ মানুষদের মুক্তির কন্ঠস্বর উচ্চকিত হয়েছে।

তারা বিশ্বের বুকে সার্বিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য নব অভিযানের জয়গান গাইছে। এমন যুক্তি ও অধিকার আদায়ের কথা উচ্চারিত হয়েছে ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালের কণ্ঠে। প্রাণী হিসেবে মানুষের মতো বিড়ালেরও ক্ষুৎপিপাসা আছে। কিন্তু ক্ষুদ্র প্রাণী বলে কেউ তার জীবনের মূল্য দেয় না। বেঁচে থাকার মতো খাবার সে পায় না। তাই সে তার অধিকার আদায়ের জন্য যৌক্তিক ও জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করে। তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে অধিকারহারা মানুষের সাহসী কন্ঠস্বর উচ্চারিত হয়েছে। এভাবে অধিকারহারা, বঞ্চিত, শোষিত শ্রেণির মুক্তির নব অভিযানের জয়গান ধ্বনিত হয়েছে উদ্দীপক ও বিড়াল’ রচনায়। শ্রেণির মানুষ

ঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের কারণে
চিরকাল নিপীড়িত হয়ে আসছে। দরিদ্র ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে। তারা তাদের জীবন ও শ্রমের মূল্যায়ন পায় না। যার কারণে তারা অধিকার আদায়ের জন্য একসময় সোচ্চার হয়ে ওঠে। এমন চেতনা প্রকাশিত হয়েছে “বিড়াল’ রচনায়।

উদ্দীপকে নিপীড়িত শ্রেণির মানুষদের মুক্তির ঐকতান উচ্চারিত হয়েছে। পরাধীনতা নয়, তারা বিশ্বে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। মুক্তকণ্ঠে নিপীড়িত মানুষদের নব অভিযান ও নব উত্থানের জয়গান ধ্বনিত হয়েছে আলোচ্য উদ্দীপকে। ‘বিড়াল’ রচনায়ও বিড়ালের জবানিতে নিপীড়িত সমাজের চিত্র উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। বিড়াল ধনীদের উদ্দেশ্যে বলেছে, ‘এ সংসারে ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, মাংস— সবই তোমরা খাবে। আমরা কিছু পাব না? তোমাদের মতো আমাদেরও ক্ষুৎপিপাসা আছে। কিন্তু আমরা কি কেবল না খেয়ে মারা যাব। আমাদের কি বাঁচার কোনো অধিকার নেই।’ এভাবে পরোক্ষভাবে ‘বিড়াল’ রচনায় নিপীড়িত সমাজের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

সাম্যবাদী ও মানবতাবাদী মানসিকতায় ‘বিড়াল’ রচনায় লেখক আমাদের বৈষম্যবাদী সমাজের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের অধিকার প্রদানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। একশ্রেণির মানুষ কেবল সম্পদের পাহাড় গড়বে, আর একশ্রেণির মানুষ নিরন্নভাবে মানবেতর জীবনযাপন করবে, এমন বৈষম্যের অবসান কামনা করে

উদ্দীপক ও ‘বিড়াল’ রচনায় নিপীড়িত শ্রেণির জাগরণ ও জয়গান ধ্বনিত হয়েছে। তাই নিপীড়িত সমাজের চিত্র উন্মোচনের দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘বিড়াল’ রচনাটি বাস্তবধর্মী ও সার্থক হয়েছে।
প্রশ্ন ২১ মধুর সিঁদ কাটিবার বিশেষ দরকার ছিল। গত বৈশাখ মাসে রসুলপুরের মেলায় পুলিশের লাইসেন্স লইয়া বালা খেলার ব্যবস্থা | করিয়া সে কিছু টাকা পাইয়া ছিল। তারপর এ পর্যন্ত তাহার আর কোনো উপার্জন হয় নাই। উপার্জনের চেষ্টাও অবশ্য সে করে নাই। হাতের টাকা একেবারে শেষ না হইয়া গেলে রোজগারের দিকে মধু নজর দিতে পারে না। এমনিভাবে সে এতকাল কাটাইয়াছে। এই তাহার স্বভাব । বছরের কয়েকটা মাস তাহার বেশ সুখেই কাটিয়া যায়। বাকি মাসগুলো অভাবের পীড়নে তাহার ও কাদুর কষ্টের সীমা থাকে না। একেবারে অচল হইয়া পড়ার আগে মধু সহসা আবার কিছু টাকা সংগ্রহ করিয়া ফেলে। | রানী সরকার । প্রশ্ন নম্বর-১/
ক. ‘সরিষাভোর’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কমলাকান্ত বিড়ালকে ‘পতিত আত্মা’ বলার কারণ কী? বুঝিয়ে
লেখো।
গ. উদ্দীপকের মধু ও ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালের চৌর্যবৃত্তির
তুলনা করো।
ঘ. জীবিকার জন্য মধু ও বিড়ালের চুরি করাকে তুমি সমর্থন কর
কি? | ‘সরিষাভোর’ শব্দের অর্থ স্বল্পপরিমাণ । মতামত দাও।
8
২১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
| বিড়াল ক্ষুধার জ্বালায় পাপ কাজেও পিছপা হয় না বলে কমলাকান্ত
বিড়ালকে ‘পতিত আত্মা’ বলেছে।
সাধারণত মানুষের নৈতিক অধঃপতনকে পতিত আত্মা বোঝানো হয়। বিড়াল পথে পথে ঘুরে বেড়ায় আর ক্ষুধার জ্বালায় মানুষের খাবার চুরি করে। সেই অপরাধে নির্যাতনের শিকার হয়েও সে চুরির পক্ষেই সাফাই গায়। এ কারণে কমলাকান্ত বিড়ালকে পতিত আত্মা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
উদ্দীপকের মধু ও ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালের চৌর্যবৃত্তিতে সাদৃশ্য থাকলেও চেতনাগত পার্থক্য লক্ষণীয় ।
‘বিড়াল’ রচনার বিড়াল চৌর্যবৃত্তি করলেও এর পেছনে রয়েছে তার ক্ষুরধার যুক্তি। সে বঞ্চিত শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে স্বভাবের দোষে নয়, অভাবের তাড়নায় চুরি করে। কিন্তু উদ্দীপকের মধু স্বভাবগতভাবেই চৌর্যবৃত্তিতে অভ্যস্ত ।
উদ্দীপকের মধুর চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে। তার যখন অভাব দেখা দেয় তখনই সে চুরিতে নামে। চুরি করে যা উপার্জন করে তা নিয়ে, প্রয়োজন মেটায়। একবার যা পায় তা শেষ হবার আগ পর্যন্ত সে আর উপার্জনে নামে না। সে সিঁদ কেটে উপার্জন করে। তার এমন উপার্জন স্বভাবগত। “বিড়াল’ রচনার বিড়ালও কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ চুরি করে যায়। তবে বিড়াল উদ্দীপকের মধুর মতো পেশাগত চোর নয়। বিড়ালটি মনে করে, এটা তার প্রাপ্য অধিকার না পাওয়ার ফল। ধনী যদি দরিদ্রকে তার প্রাপ্য দিত তাহলে সে চোর হতো না। ধনীরাই গরিবকে চোর হতে বাধ্য করে। কমলাকান্তকে বিড়ালটি বুঝিয়ে দেয় সে যদি চুরি করে অপরাধ করে থাকে তবে কমলাকান্তও কম অপরাধী নয়। কারণ বিড়াল তার প্রয়োজন পূরণে কমলাকান্তের মতো মানুষের মুখাপেক্ষী। কিন্তু যখন তারা সে প্রয়োজন না মিটিয়ে নিজেরা ক্ষুধা নিবারণ করে তখন বিড়ালের মতো বঞ্চিত, অভুক্তদের চুরি করা ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। বিড়ালের এই চেতনা উদ্দীপকের মধুর মাঝে পরিলক্ষিত হয়নি।

What do you think?

Written by Selfish World

Leave a Reply

‘সরিষাভোর’ শব্দের অর্থ কী?

অনুপমের পিসতুতো ভাইয়ের নাম কী?