আলোচ্য গল্পে বিড়াল চরিত্রটি সকল শোষিত, বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে চিত্রায়িত হয়েছে। লেখক এই বিড়ালের মুখ দিয়ে শোষিত
শ্রেণির অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। উদ্দীপকের আখনা হতদরিদ্র একজন মানুষ। তৎকালীন সমাজের প্রেক্ষিতে দুই টাকা জোগাড় করাও তার জন্যে অসম্ভব। তাই তো পরীর চুড়ির জন্য সে দুই টাকা দিতে পারে না। অবশেষে পরীর আবদার পূরণ করতে মনিবের রূপাবাঁধানো হুঁকাটা চুরি করে সে। এদিকে, আলোচ্য গল্পের বিড়ালকেও হতদরিদ্র শ্রেণি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
বিড়াল কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ চুরি করে খেয়ে ফেলেছিল। দারিদ্র্য ও চুরি করার দিক থেকে আখনা ও বিড়ালের সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু চুরি করার কারনটি তাদের মাঝে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করেছে। বিড়াল তার জঠর যন্ত্রণা নিবারণ করতে বাধ্য হয়ে চুরি করেছে অথচ আখনা পরীর আবদার পূরণ করার জন্যে চুরির পথ বেছে নিয়েছিল। এভাবেই বিড়াল ও আখনার মাঝে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দুইই পরিলক্ষিত হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আপনার চুরি সমর্থন করেননি- মন্তব্যটি যথার্থ। ‘বিড়াল’ গল্পের লেখক সমস্ত শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত শ্রেণির পক্ষে কলম ধরেছেন। একটি বিড়াল চরিত্রের মধ্য দিয়ে বঞ্চিত শ্রেণির মনঃকষ্ট ভুলে ধরে তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছেন। উদ্দীপকের পরী আখনার কাছে রূপার চুড়ির বায়না ধরে। চুড়ির মূল্য দুই টাকা যা আপনার সামর্থ্যের বাইরে। কিন্তু পরীর মন রক্ষার্থে আখনা মনিবের রূপাবাধানো হুঁকা চুরি করে টাকার বন্দোবস্ত করে। এদিকে, আলোচ্য গল্পের বিড়াল প্রচণ্ড ক্ষুধাতাড়িত হয়ে চুরির পথ বেছে নিয়েছিল।
‘বিড়াল’ গল্পটিতে লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সকল বঞ্চিত- নিষ্পেষিত-দলিত শ্রেণির অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের কথা শ্লেষাত্মক ও যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। তিনি ক্ষুধার্ত বিড়ালের চুরি করে দুধ খাওয়াকে অপরাধ বলার আগে কৃপণ ধনীর অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ক্ষুধার্ত দরিদ্র মানুষের চুরি করার জন্য তিনি কৃপণ ধনীদের অর্থনৈতিক অসহযোগিতাকে দায়ী করেছেন। চুরি ক্ষুধার্ত-বঞ্চিত বিড়ালের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু উদ্দীপকের আখনা ক্ষুধার মতো সংবেদনশীল কারণে চুরি করেনি, চুরি করেছে মনোধাসনা বা আবদার পূরণের জন্য। তাই আখনা দরিদ্র হলেও তার চুরির কারণ লেখকের কাছে সমর্থনযোগ্য নয় কেননা তা বিলাসিতা দ্বারা তাড়িত।
প্রশ্ন ১০ ভক্তপুর গ্রামের শ্মশানঘাটের এক প্রান্তে জরাজীর্ণ একটি মঠ। তার পাশ দিয়ে ক্ষুধায় কাতর ভবেশচন্দ্রে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করছিল। তার এই উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি ভক্তপুর গ্রামের নিরক্ষর, অজ্ঞান মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং ভবেশচন্দ্র তাদের জানায় যে, সে বহুদূর থেকে স্বপ্নে সাঁইবাবার মঠের খবর পেয়েছে। এ কথা শুনে নানা গ্রাম থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে নাম না জানা মঠকে কেন্দ্র করে। আর এই মঠের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে ভবেশচন্দ্র সকলের শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠে এবং তার সকল অভাব দূর হয়। মাঝে মাঝে ভবেশচন্দ্র তার প্রতারণার কথা ভেবে অপরাধবোধে জর্জরিত হলেও আবার ভাবে যে, এই প্রতারণাই তাকে টিকিয়ে রেখেছে। তাই সে একে গুরুতর অপরাধ বলে মনে করে না।
ঢিাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেন। এর নম্বর- ক. বৃদ্ধের নিকট কী হতে পারলে বিড়ালের দৃষ্টি হয়? খ. বিড়াল চোরকে সাজা দেওয়ার পূর্বে বিচারককে তিন দিন উপবাস করার কথা বলেছে কেন? গ. উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ রচনার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? বর্ণনা করো।
ঘ. টিকে থাকার নির্মম বাস্তবতা সমাজে অনেক সময় প্রতারণা ও অপরাধের বিস্তার ঘটায়”- মন্তব্যটি উদ্দীপক ও ‘বিড়াল’ প্রবন্ধ অনুসরণে বিশ্লেষণ করো। বৃদ্ধের নিকট যুবতী ভার্যার সহোদর হতে পারলে বিড়ালের পুষ্টি হয়।
বিচারক যদি অপরাধীর বেদনা বুঝতে পারেন তাহলে বিচার সার্থক হয় এ কারণে চোরকে সাজা দেওয়ার আগে বিচারককে তিন দিন উপবাস করার কথা বলা হয়েছে। বিচারকের কাজ সর্বদা ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষভাবে অপরাধের কারণ বের করে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া। ক্ষুধা না লাগলে কেউ চুরি করে না। তাই চোরের বিচার করার আগে বিচারক যদি তিন দিন উপবাস করেন | তবেই তিনি বুঝতে পারবেন ক্ষুধার জ্বালা কেমন এবং চোরের চুরির কারণ
কী ।
বিষয়টি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে। না অভাবের তাড়নায় অন্যায়ের পথ বেছে নেওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের সাথে ‘বিড়াল’ রচনার সাদৃশ্য নির্মিত হয়। “বিড়াল’ রচনায় বিড়ালটি ক্ষুধার জ্বালায় প্রাচীরে প্রাচীরে ঘুরে বেড়ায়। তবু | তাকে কেউ খেতে দেয় না। তাই ক্ষুধার জ্বালায় বিড়ালটি কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ খেয়ে ফেলে। কাজটি অন্যায় জেনেও বিড়াল তা করতে প্রবৃত্ত হয় শুধু ক্ষুধা নিবারণের জ উদ্দীপকের ভবেশচন্দ্রও বিড়াল’ রচনার বিড়ালের মতো ক্ষুধায় কাতর। ক্ষুধা নিবারণ করতে গিয়ে সে অন্যায় পথের আশ্রয় নেয়।
নিরক্ষর গ্রামবাসীকে সে মিথ্যা বলে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। মানুষকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সে তার অভাব দূর করতে সচেষ্ট হয়। “বিড়াল’ রচনায়ও বিড়াল কমলাকান্তের জন্য বরাদ্দকৃত দুধ খেয়ে অপরাধ করে। উভয়ক্ষেত্রে বিড়াল ও ভবেশচন্দ্র নিরুপায় হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে অনৈতিক পথ বেছে নেয়। ‘বিড়াল’ রচনার এ দিকটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
যা বিড়াল’ রচনায় শোষক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
স্বেচ্ছাকৃত অপরাধপ্রবণতা খুব কমই দেখা যায়। মূলত পরিস্থিতির শিকার হয়েই অপরাধী অপরাধকর্মে প্রবৃত্ত হয়। ‘বিড়াল’ রচনায় বিড়াল যে চুরি করে কমলাকান্তের রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলেছে, তা মূলত ক্ষুধা নিবারণের জন্যই।
উদ্দীপকের ভবেশচন্দ্র অভাবের তাড়নায় কাতর একজন মানুষ। ক্ষুধার জ্বালায় সারাদিন উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ানোর পর অবশেষে সে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। গ্রামবাসীদের মিথ্যা বলে সে মূলত তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তার অভাব দূর করার জন্য ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সে এমন কাজ করতে প্রবৃত্ত হয়েছে।
উদ্দীপকের ভবেশচন্দ্র এবং বিড়াল’ রচনায় বিড়াল উভয়ই ক্ষুধার জ্বালা নিবারণে অন্যায়কে পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। যদি তারা অন্য কোনো উপায়ে তাদের ক্ষুধা মেটাতে পারত, তাহলে তারা এ কাজে নিয়োজিত হতো না। কেননা বেঁচে থাকার জন্যই মানুষের এই নিরন্তর সংগ্রাম। ক্ষুদ্র তেলাপোকা থেকে মানুষ সকলে বেঁচে থাকতে প্রাণপণ লড়াই করে যায।
এ সংগ্রামে তারা ন্যায়-অন্যায় যেকোনো পথ বেছে নেয়। কেননা টিকে থাকাই হচ্ছে মানুষের চরম সার্থকতা। সমাজের এত অনাচার, বিশৃঙ্খলা, অপরাধ, সবকিছু মূলত টিকে থাকার ইচ্ছের কারণেই সংঘটিত হচ্ছে। প্রতারণা ও | অপরাধবোধ বিবেচনা করার মতো বোধ তখন কাজ করে না। তাই এ কথা যথার্থ যে, টিকে থাকার নির্মম বাস্তবতা সমাজে অনেক সময় প্রতারণা ও অপরাধের বিস্তার ঘটায়।