প্রশ্ন ১ দরিদ্র বাবা-মা তাঁদের প্রথম সন্তানের নাম রাখেন সাজাহান। তাঁদের স্বপ্ন, সাজাহান অনেক বড় হবে। কিন্তু আর্থিক অভাব ও শিক্ষা না থাকায় সাজাহান কিশোর বয়সেই কাজে নেমে পড়ে। পাশের গ্রামের কৃপণ ও ধনী আলম সাহেবের বাড়িতে সাজাহান কাজের লোক হিসেবে নিযুক্ত হয়। প্রতিদিন ঘরে ও বাইরে সমান পরিশ্রম করে সাজাহান। কিন্তু পরিশ্রম অনুযায়ী তার ভাগ্যে খাবার জোটে না। একদিন বাজারের টাকা বাঁচিয়ে সাজাহান লাড্ডু কিনে খায়। কিন্তু টাকার হিসেব দিতে না পারায় আলম সাহেব তাকে নির্দয়ভাবে মারেন। মনে ক্ষোভ নিয়েও সাজাহান সব সহ্য করে, কারণ সে জানে, সে গরিব-অসহায়।
চা.বো., দিবো; সি.কো. হবে. ১৮৪ প্রশ্ন নম্বর-১/
ক. বিড়াল কমলাকান্তকে কতদিন উপোস করতে বলেছে? খ. চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শতগুণ দোষী – এ কথার তাৎপর্য কী?
গ. উদ্দীপকের সাজাহান ও ‘বিড়াল’ রচনার বিড়াল একই বিড়ম্বনার
অংশীদার— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বিড়াল’ রচনার ভাবসত্যের যেন প্রতীকী রূপ— এ মত কতটা গ্রহণযোগ্য? মূল্যায়ন করো।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক বিড়াল কমলাকান্তকে তিনদিন উপোস করতে বলেছে । প্রয়োজনাতীত ধন থাকা সত্ত্বেও কৃপণ ধনী ক্ষুধার্তের জন্য
সম্পদ বিতরণ করে না বলেই লোকে চুরি করে। ‘বিড়াল’ রচনায় বিড়ালের সাথে কমলাকান্তের কাল্পনি কথোপকথনে চোরের চুরি করার কারণ বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, চোর চুরি করে বলে সে দোষী। অথচ ধনীরা প্রয়োজনাতীত ধন থাকা সত্ত্বেও তারা ক্ষুধার্তের প্রতি মুখ তুলে চায় না। তাই চোর চুরি করতে বাধ্য হয়। অতএব, চোরের চেয়েও কৃপণ ধনী বেশি অপরাধী।
গ উদ্দীপকের সাজাহান ও ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালের মাঝে ন্যায্য
অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।
‘বিড়াল’ রচনায় লেখক কল্পিত বিড়ালের ভাষ্যে বলেছেন, দরিদ্রের চুরি করার কারণ হচ্ছে ধনীর কৃপণতা। সমাজে গরিবেরা বেঁচে থাকার জন্য সামান্য খাবার পর্যন্ত পায় না। ক্ষুধা নিবারণের জন্য দরিদ্ররা চুরি করলে ধনীরা লাঠি হাতে তাদের মারতে উদ্যত হয়। এই রীতি অনুসরণ করেই কমলাকান্ত বিড়ালকে দুধ চুরির দায়ে লাঠি হাতে মারতে এগিয়ে যায।
উদ্দীপকে অধিকার বঞ্চিত কিশোর সাজাহানের কথা উঠে এসেছে। আর্থিক দুরবস্থার কারণে সে পাশের গ্রামের ধনী অথচ কৃপণ আলম সাহেবের বাড়িতে কাজ করে। সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করলেও সাজাহানের ভাগ্যে পর্যাপ্ত খাবার জোটে না। বরং বাজারের টাকা বাঁচিয়ে একদিন লাড্ডু কিনে খেলে আলম সাহেব তাকে নির্দয়ভাবে মারধর করেন। ‘বিড়াল’ রচনায় বর্ণিত হয়েছে, ধনী ব্যক্তির স্বভাবের কারণেই দরিদ্রেরা চুরি করে। কারণ,
কৃপণ ধনী দরিদ্রের মাঝে সম্পদ বিতরণ না করে নিজেকে আরও ধনী করতে ব্যস্ত থাকে। বাঁচার তাগিদে দরিদ্র চুরি করলে ধনীরা তাদের শাস্তি | দিতে দ্বিধা করে না। সুতরাং বলতে পারি, বঞ্চনা ও শোষণের দিক থেকে উদ্দীপকের সাজাহান ও ‘বিড়াল’ রচনার বিড়াল একই বিড়ম্বনার অংশীদার এ মন্তব্যটি যথার্থ।
‘বিড়াল’ রচনায় শোষক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু-চোরের অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
‘বিড়াল’ রচনায় ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, দরিদ্রের বঞ্চনা, সমাজের অরাজকতায় ধনীর ভূমিকা ইত্যাদি নানা বিষয় বিড়ালের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এখানে বিড়ালের সঙ্গে কমলাকান্তের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে লেখক মূলত সামাজিক নানা অসঙ্গতির বিষয়ে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। উদ্দীপকেও এ ধরনের শোষণ-বঞ্চনার চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকে সাজাহান নামের এক কিশোরের বঞ্চনার দিক প্রতিফলিত হয়েছে। সাজাহানের আর্থিক সঙ্গতি ও উপযুক্ত শিক্ষা না থাকায় পাশের গ্রামের আলম সাহেবের বাসায় কাজ নেয়। সাজাহান সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করলেও কৃপণ আলম সাহেব তাকে পর্যাপ্ত খাবার দিতেন না। একদিন বাজারের টাকা বাঁচিয়ে লাড্ডু কিনে খেলে আলম সাহেব তাকে নির্দয়ভাবে মারধর করেন। উদ্দীপকের আলম সাহেবের এ মানসিকতা ও আচরণ ‘বিড়াল’ রচনার কৃপণ-ধনীদের মাঝেও লক্ষণীয়।
“বিড়াল’ রচনায় বর্ণিত হয়েছে দরিদ্রের চুরি করার কারণ হচ্ছে ধনীর কৃপণতা। এ সমাজে দরিদ্রকে বঞ্চিত করে ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে, অথচ গরিবেরা থাকে অভুক্ত। লেখক একটি প্রতীকী বিড়ালের মাধ্যমে সমাজের এসব অসঙ্গতিকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। সেইসঙ্গে যুক্তিনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করেছেন অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা। ধনীরা সম্পদের সুষম বণ্টন করলে সমাজে এত বৈষম্য তৈরি হতো না। উদ্দীপকেও সম্পদের অসম বণ্টন ও দরিদ্রের প্রতি ধনীর অত্যাচারের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। সমাজের এ বাস্তবতায় সাজাহানের মতো দরিদ্র ছেলে বাজারের টাকা বাঁচিয়ে সামান্য লাড্ডু কিনে খাওয়ার অপরাধে আলম সাহেবের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়। অতএব বলতে পারি, উদ্দীপকটি ‘বিড়াল’ রচনার ভাবসত্যেরই যেন প্রতীকী রূপ— এ মতটি পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য।