‘বিড়াল’ রচনায় অভাবের তাড়নায় বিড়াল চুরি করে। উদ্দীপকের মধুও চুরি করেই জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের উভয়ের এ চৌর্যবৃত্তি আত্মসম্মানহানিকর ও অকর্মণ্য চরিত্রের পরিচয় প্রকাশ করে বিধায় তা অগ্রহণযোগ্য । উদ্দীপকের মধু স্বভাবগতভাবেই চোর। সে শারীরিকভাবে অক্ষম বা পঙ্গু নয়। পরিশ্রম করে উপার্জনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে সিঁদ কেটে উপার্জন করে। এছাড়াও পুলিশের সহায়তায় বালা খেলা দিয়ে সে অর্থ কামাই করে। এটাও এক ধরনের চুরি। অথচ এসব ছেড়ে সে যদি কাজ করে উপার্জন মনোযোগী হতো তাহলে সমাজে সে ভালো মানুষ হিসেবেই বিবেচিত হতো। কারণ চুরি একটি অসম্মানজনক ও গর্হিত কাজ।
‘বিড়াল’ রচনায় বিড়াল তার চুরির সপক্ষে অনেক যুক্তি উপস্থাপন করে। সে সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে চৌর্যবৃত্তির পক্ষে সাফাই গায়। সমাজে যারা অধিকারবঞ্চিত তারা প্রয়োজনের তাগিদেই চুরি করে থাকে বলে সে মত দেয়। তার মতে, যারা ধনী তারা যদি গরিবের প্রতি মনোযোগী হয় তাহলে সমাজে আর বৈষম্য থাকে না। গরিবরা অভাবের তাড়নেই চুরি করে থাকে। এজন্য তাদের যদি কোনো শাস্তি দিতে হয়, তবে সমান অপরাধে ধনীদেরও শাস্তি পাওয়া উচিত। কারণ ধনীদের কারণেই চুরির মতো অধর্ম সৃষ্টি হয়। বিড়ালের এ যুক্তি চুরির মতো একটি ঘৃণিত কাজকে উৎসাহিত করে। যা সমাজের জন্য কখনোই কাম্য হতে পারে না।
যারা পরিব বা অসহায় তারা ধনীর ধনের দিকে না তাকিয়ে পরিশ্রমী হলে তাদেরও ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারে। পরিশ্রম ও কাজের মাধ্যমে তারা যদি সৌভাগ্যবান হয় তখন আর তাদের অভাব থাকবে না। কিন্তু সে কাজটি না করে অন্যের ধন চুরি করা সমীচীন নয়। অপরের সম্পদ আছে বলে সেদিকে উন্মুখ থাকা আত্মসম্মানের পরিপন্থী বলেই প্রতীয়মান। ‘বিড়াল’ রচনার বিড়াল ও উদ্দীপকের মধু সেই অসম্মানের কাজটি বলে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
প্রশ্ন ২২ অকাল বিধবা মিথিলার কষ্টের সংসার। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে তার দিন কাটে। বাড়িতে বাড়িতে কাজ করাই তার রোজগারের একমাত্র উপায়।
কিন্তু এত অল্প আয়ে তার সংসার চলে না। ফলে বাধ্য হয়েই তাকে বিভিন্ন বাড়ি থেকে তৈল, লবণ, সবজি চুরি করতে হয়। চুরি করার কারণে এখন আর কেউ তাকে কাজে নিতে চায় না। দুই সন্তান নিয়ে সে যেন অথৈ সাগরে এসে পড়েছে, পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজ। প্রশ্ন নালা -২।
ক. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কোন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন?
খ. ‘তোমাদের পেট ভরা, আমার পেটের ক্ষুধা কী প্রকারে জানিবে?’ লাইনটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ রচনার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?— তা তুলে ধরো। ঘ. “মিথিলার কাজ নীতিবিরুদ্ধ ও ধর্মাচারবিরোধী — ‘বিড়াল’ প্রবন্ধ অবলম্বনে মূল্যায়ন করো।
২২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। অম্ল না পাওয়ার ক্ষোভে ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় অধীর হয়ে ‘বিড়াল’ আলোচ্য উক্তিটি করেছে। তখন বিড়ালটি ভয় না পেয়ে ফিরে দাঁড়ালে কমলাকান্তের মনে সাম্যচেতনা জাগ্রত হয়। কমলাকান্ত যেন দিব্যকর্ণ প্রাপ্ত হয়ে বিড়ালের ক্ষোভের কথা শুনতে পান।
বিড়াল যেন বলছে, তোমরা তো ক্ষুধার্ত নও, ‘তোমাদের পেট ভরা, আমার পেটের ক্ষুধা কী প্রকারে জানিবে?’ এখানে বিড়ালের এ উক্তিতে একটি অর্থনৈতিক বৈষম্যপূর্ণ সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। “বিড়াল’ রচনায় কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ খেয়ে ফেলার অপরাধে তিনি মার্জারীকে লাঠিপিঠা করতে উদ্যত হন।
[ উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ রচনায় বিধৃত সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে অসহায়-বঞ্চিত দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জীবন-যন্ত্রণার দিকটি ফুটে উঠেছে।আমাদের সমাজে ধনী-দরিদ্র দুটি শ্রেণির বসবাস। ধনীরা গরিবদের প্রতি সহানুভূতিশীল না হওয়ায় অনেক সময় দরিদ্ররা অবৈধ পথে পা বাড়াতে উদ্যত হয় এবং ধরা পড়ে শান্তির সম্মুখীন হয়। কিন্তু ধনীরা গরিবদের প্রতি দয়াবান হলে সমাজ এমন অপ্রীতিকর হয়ে উঠত না। এ দিকটি উদ্দীপক ও ‘বিড়াল’ রচনায় প্রতীকায়িত হয়েছে।উদ্দীপকে বিধবা মিথিলা ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়।
বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে সামান্য আয়ে সংসার চলে না বিধায় সে সামান্য পরিমাণে চুরি করতে উদ্যত হওয়ায় কেউ আর তাকে কাজে নিতে চায় না। এমন করুণ পরিস্থিতিতে সে দুই সন্তান নিয়ে যেন অথৈ সাগরে পড়ে গিয়েছে। “বিড়াল’ রচনায়ও বিড়াল দিনের পর দিন ক্ষুধার্ত থাকায় লেখকের দুধ চুরি করে খেলে কমলাকান্ত তাকে লাঠি মেরে শান্তি দিতে চায় । যদি বিধবা মিথিলা ও বিড়াল সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা পেত, তাহলে তাদের জীবন এত সংকটাপন্ন হতো না। এবং তারা চুরির মতো গর্হিত কাজেও উদ্যত হতো না। এভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে অসহায় দরিদ্রদের নির্মম জীবনচিত্রের দিকটি উদ্দীপক ও ‘বিড়াল’ রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে।
‘মিথিলার কাজ নীতিবিরুদ্ধ ও ধর্মাচারবিরোধী’— মন্তব্যটি ‘বিড়াল’রচনার আলোকে যথার্থ নয়।”বিড়াল’ রচনায় লেখক বিড়ালের সঙ্গে কমলাকান্তের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি চুরির অন্তর্নিহিত কারণ হিসেবে ধনীর কৃপণতা এবং বঞ্চিতজনের ক্ষুধার তাড়নাকে দায়ী করেছেন। এ দুটো দিক বিবেচনায় এনে চৌর্যবৃত্তির বিষয়টিকে তিনি মানবিক দৃষ্টিতে দেখেছেন।উদ্দীপকে মিথিলা বিধবা হওয়ার কারণে তাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। এজন্য সে অন্যের বাড়িতে কাজ নেয়।
কিন্তু সামান্য আয়ে সংসার চলে না বলে চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত হয়। এ কারণে কেউ আর তাকে কাজে নেয় না। তার এ চৌর্যবৃত্তি নীতিবিরুদ্ধ হলেও ‘বিড়াল’ রচনার আলোকে সহানুভূতির দাবি রাখে।”বিড়াল’ রচনায় বিড়ালের অনুযোগের মধ্য দিয়ে লেখক চৌর্যবৃত্তির অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধান করেছেন, যেখানে ক্ষুধা-দারিদ্র্যই চুরির মূল কারণ। আর এ দারিদ্র্যের কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেছেন বিত্তবানদের, |
যারা দরিদ্রের ধন কুক্ষিগত করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, অথচ অভুক্তকে সামান্য অন্নদান করতেও কুণ্ঠিত বোধ করে। কমলাকান্তের মতে, এরা চোরের চেয়ে বড়ো অপরাধী। কমলাকান্তের এই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মিথিলাকে অপরাধী না বলে অপরাধী বলতে হয় সেই সমাজকে, যে সমাজ তাকে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যে মিথিলার কর্মকাণ্ডকে নীতি ও ধর্মাচারের নিরিখে যাচাই করা হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য রচনায় চৌর্যবৃত্তির দিকটিকে মানবিক সহানুভূতির ভিত্তিতে বিচার করা হয়েছে। তাই সাধারণ দৃষ্টিতে মিথিলার কাজকে নীতিবিরুদ্ধ ও ধর্মাচারবিরোধী বলা গেলেও ‘বিড়াল’ রচনার মর্মার্থের আলোকে তা বলা যায় না।