প্রশ্ন ৯ এমএ পাস রফিক বন্ধুদের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথাবার্তা বলার সময় বলে নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে নয়। কিন্তু পিতৃহীন রফিক চাচার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারে না। পরসম্পদলোভী চাচার আদেশে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। নিজের মতামত প্রকাশের মানসিক দৃঢ়তা না থাকার কারণে বিয়ে বাড়িতে যৌতুকের মালামাল নিয়ে লোভী চাচার প্রশ্নের কারণে বিয়ে ভেঙে যায়। রফিকও চাচার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিয়ে বাড়ী থেকে অসহায়ের মত চলে আস।
ক. কল্যাণী কোন স্টেশনে নেমেছিল?
খ. ‘কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করিবেন আমি সৎপাত্র’— কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রফিক চরিত্রের সাথে ‘অপরিচিতা’ পরের অনুপম চরিত্রের সাদৃশ্য বিশ্লেষণ করো। ঘ. দৃঢ়তার অভাবে রফিক নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে চাচার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে— ‘অপরিচিতা’ গল্পের আলোকে
এ সিদ্ধান্তের সাথে তুমি কি একমত?
কল্যাণী কানপুর স্টেশনে নেমেছিল। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমকে মাতৃ-আজ্ঞাবহ, নিরীহ এক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে- এখানে সে বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। ভালো মানুষ হওয়ার কোনো ঝাট না থাকায় অনুপম স্বভাবতই একজন ভালো মানুষ। এমএ পাস অনুপম মায়ের আদেশ যথাযথভাবে পালন করে। এমনকি সে তামাক পর্যন্ত খায় না। আমাদের সমাজে বিয়ের প্রসঙ্গে সৎপাত্র সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করা হয়, এ সকল বৈশিষ্ট্য তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই অনুপমের বিশ্বাস – কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করবেন সে সৎপাত্র।
স্বাধীন ব্যক্তিত্ব এবং মানসিক দৃঢ়তার অভাব ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম এবং উদ্দীপকের রফিকের চরিত্রকে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম শিক্ষিত কিন্তু ব্যক্তিত্বহীন এবং পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায়। নিজের বিয়ের সময়ে সে যে ধরনের ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়েছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তার নেই ।
মামা যৌতুকের দাবি করলেও সে তার বিরোধিতা করেনি। এমনকি বিবাহের পূর্বে কন্যার শরীর থেকে গহনা খুলে পরীক্ষা করার যে প্রস্তাব মামা দেন তাতেও কোনো বিরোধিতা করতে পারেনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় কন্যার পিতা শম্ভুনাথ সেন অনুপমের সঙ্গে কল্যাণীর বিবাহ দিতে অসম্মতি জানান। আর অনুপমকে নীরবে সে অপমান সহ্য করতে হয়। উদ্দীপকের রফিক চরিত্রেও এ দিকটি লক্ষিত হয়।
উদ্দীপকের রফিক অনুপমের মতোই ব্যক্তিত্বহীন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগ। কারণ পিতৃহীন রফিক চাচার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারে না। পরসম্পদলোভী চাচার আদেশে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। যৌতুকের কারণে তারও বিয়ে ভেঙে যায়। রফিকের মতো অনুপমও নিজের মতামত প্রকাশে মানসিক দৃঢ়তা দেখাতে পারে না। মামাকে অনুসরণ করে বিয়ের আসর থেকে সেও রফিকের মতো অসহায়ভাবে চলে আসে।
অপরিচিতা’ গল্পের মামা ও উদ্দীপকের চাচার অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মাধ্যমে অনুপম ও রফিকের ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় পাওয়া যায়। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপম মানসিকভাবে দুর্বল একজন মানুষ। শিক্ষিত কিন্তু ব্যক্তিত্বরহিত অনুপম নিজের জীবন সম্পর্কে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ, এমনকি অর্থনৈতিকভাবেও সে স্বাবলম্বী নয়। তার এ পরাবলম্বনের দিকটি আলোচ্য উদ্দীপকেও লক্ষণীয়।
উদ্দীপকের রফিক অনুপমের মতোই মানসিক দৃঢ়তাহীন। এজন্যই সে তার চাচার নির্দেশ পালনে বাধ্য হয়েছে। মূলত চাচার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই। এমনকি অনুপমের মতো নিজের বিয়েতে সে যৌতুক গ্রহণেরও বিরোধিতা করেনি। তাছাড়া অনুপমের মতো রফিকও চাচার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিয়ের আসরে কিছু বলতে পারেনি। বিয়ে ভেঙে গেলে সে পুতুলের মতো অসহায়ভাবে বিয়ের সভা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। বলা যায়, মানসিক দৃঢ়তার অভাবেই রফিকের এমন পরিণতি।
‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপম ব্যক্তিত্বহীন, পরনির্ভরশীল একটি চরিত্র। নিজের | বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো দৃঢ়তা তার নেই। তার মতে, মামাই পৃথিবীতে তার ভাগ্যদেবতার প্রধান এজেন্ট। মানসিক দৃঢ়তার অভাবে সে চূড়ান্ত অপমানিত হয়েছে বিয়ের আসরে। কন্যার পিতা তার সঙ্গে নিজের কন্যাকে বিয়ে দিতে অসম্মতি জানিয়েছেন। এতো কিছু সত্ত্বেও অনুপম স্বাধীন ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি। উদ্দীপকের রফিকও তেমনি মানসিক দৃঢ়তার অভাবে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে চাচার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। তাই অপরিচিতা’ গল্পের আলোকে প্রশ্নে উল্লেখিত মন্তব্য সম্পূর্ণ সত্য বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন ১০ অফিস থেকে ফেরার পথে রাশেদ বাসে দীর্ঘদিন পর দেখতে পেল রাবেয়াকে। মনে পড়ল রাবেয়ার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। | সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পর হঠাৎ রাশেদের বাবা মোটা অংকের | যৌতুক দাবি করে বসে মেয়ের বাবার কাছে। উচ্চশিক্ষিত সুদর্শন পুত্রের জন্যে এটা নাকি তার ন্যায্য দাবি। রাবেয়ার বাবার যথেষ্ট সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তিনি রাজি হলেন না যৌতুক দিতে। ক্ষোভে অপমানে তৎক্ষণাৎ ভেঙে দেন বিয়ে। ক্ষুব্ধ রাবেয়াও সমর্থন করে বাবাকে। বিয়ে ভেঙে গেলেও রাবেয়া থেমে থাকেনি। এক ব্যাংকারকে বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। চাকরি করছে একটা কলেজে। কি. বো. ১৬। প্রশ্ন না-
ক. ‘অপরিচিতা’ গল্পে শম্ভুনাথ সেনের পেশা কী ছিল ? ঘ. ভালো মানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নাই”- ব্যাখ্যা করো। ২
দীপকের রাবেয়ার বাবার সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের শম্ভুনাথ
বাবুর সাদৃশ্য কোথায় ? “উদ্দীপকের রাবেয়া অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী চরিত্রকে সম্পূর্ণভাবে ধারণ করে না”— স্বীকার করো কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দেখাও।
১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
‘অপরিচিতা’ গল্পে শম্ভুনাথ সেনের পেশা ছিল ডাক্তারি । | মামার অভিভাবকত্বে বড় হওয়া অনুপম সমাজ-সংসারের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পর্কে সর্বদাই উদাসীন ছিল।
অনুপম এমএ পাস করলেও সংসার বা সমাজের প্রতি তাকে কোনো দায়িত্ব পালন করতে হয় না। তার পিতার মৃত্যুর পর সংসারের অভিভাবকের দায়িত্ব তার মামাই পালন করেন। এমন দায়িত্ব-কর্তব্যহীন ভালো, মানুষ হওয়া বেশ সহজ। কেননা যেখানে কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য নেই সেখানে ভুল বা ঝঞ্ঝাটের কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই গল্পে বলা হয়েছে, ‘ভালোমানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নাই ।’
| ‘অপরিচিতা’ গল্পে শম্ভুনাথ সেনকে স্পষ্টভাষী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। । গল্পে শম্ভুনাথ সেন সমাজে গেড়ে বসা ঘৃণ্য যৌতুক প্রথাকে প্রতিরোধ করেছেন আপন বৈশিষ্ট্যে। কল্যাণীর বিয়ের গহনা নিয়ে অনুপমের মামা যে আচরণ করেছেন শম্ভুনাথ সেন তা মেনে নেননি। সবরকম লৌকিকতার ভয় থেকে মুক্ত হয়ে তিনি নিজের মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন।
উদ্দীপকের রাবেয়ার বাবা যৌতুক প্রথা বিরোধী একজন দৃঢ় মানসিকতার মানুষ। যথেষ্ট সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তিনি যৌতুক দিতে রাজি হননি। রাশেদের বাবার যৌতুকের দাবি শুনে ক্ষোভে, অপমানে বিয়ে ভেঙে দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ রাবেয়াও সমর্থন করে তার বাবার সিদ্ধান্তকে। আলোচ্য ‘অপরিচিতা’ গল্পেও তেমনি এক ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে বরপক্ষের যৌতুক লালসার বিপরীতে শম্ভুনাথ সেন ও তাঁর কন্যা কল্যাণীর আত্মমর্যাদাবোধের জয় হয়। গল্পের শম্ভুনাথ সেন এবং উদ্দীপকের রাবেয়ার বাবা উভয়েই বরপক্ষের অসংযত যৌতুক লালসা ও কূপমণ্ডুক মানসিকতার বিপক্ষে। আর এ বিষয়টিই তাদের দুজনের মধ্যে সাদৃশ্য স্থাপন করেছে।