গ উদ্দীপকের সানজিদার সঙ্গে কল্যাণীর দৃঢ় ব্যক্তিত্বের সাদৃশ্য এবং যৌতুকের কাছে মাথা নত না করার ঘটনায় বৈসাদৃশ্য উভয়ই লক্ষ করা যায়।
‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণী চরিত্রটি বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সমাজে গেড়ে বসা যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ধ্বনিত হয়েছে এ চরিত্রের মাধ্যমে। পিতার কথায় অনুপমকে বিয়ে না করে সে পিতার যৌক্তিক সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। এছাড়া সমাজের অবহেলিত নারীদের শিক্ষাদানের মহান দায়িত্বে সে নিজেকে নিয়োজিত করতে চেয়েছে।
সর্বোপরি সেবাব্রত ও নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে কল্যাণী এক অসাধারণ নারী চরিত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
উদ্দীপকের সানজিদা বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সে বার বার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরও দুঃখে কাতর হয়নি। বিয়েই যে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয় তা সে উপলব্ধি করতে পেরেছে।
‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীও এমনই মানব সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছে। সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের পক্ষে মোটেও সহজ ছিল না। এরূপ বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বই তাদের দুজনকে এক করে দিয়েছে। কিন্তু কল্যাণী বরপক্ষকে বিয়ের আসর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। পুরুষশাসিত সমাজের কাছে এমনকি যৌতুকের কাছে মাথা নত করেনি। তার চরিত্রে ফুটে উঠেছে প্রতিবাদী দৃঢ় ব্যক্তিত্ব। এসবের বিচারে উদ্দীপকের সানজিদার সাথে তার কিছু বৈসাদৃশ্যও বিদ্যমান।
ঘ) উদ্দীপকটিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল বক্তব্য আংশিক প্রতিফলিত
হয়েছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পেই প্রথম যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের কথা তুলে ধরেছেন লেখক। অপিরিচিতা বিশেষণের আড়ালে বর্ণিত হয়েছে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক নারীর কাহিনি। ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও তার অভিব্যক্তিতে গল্পটি সার্থক হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকে সানজিদা পুরুষশাসিত সমাজে বিরূপ মনোভাবের শিকার। কিন্তু সে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের কারণে হতাশ হয়ে পড়েনি।
মানবসেবায় সে নিজেকে ব্যস্ত করে রেখেছে। বিয়ে না হওয়া একজন নারীর জীবন দুঃখের হলেও সানজিদা এটিকে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য মনে করে না। এর মধ্য দিয়ে তার দৃঢ় ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। যদিও তার পরিবারের কেন তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
‘অপরিচিতা’ গল্পে উদ্দীপকের বক্তব্য ফুটে উঠলেও সেই সঙ্গে ধ্বনিত হয়েছে প্রতিবাদের সুর। গল্পের কল্যাণী চরিত্রের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজে নারী জাগরণের বিষয়টি উঠে এসেছে। সমসাময়িক যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গল্পে উঠে আসলেও উদ্দীপকে তার আভাস নেই। সে যুগে কন্যাপক্ষ কর্তৃক বিয়ে ভেঙে দেওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু পিতা শম্ভুনাথ ও কন্যা কল্যাণীর স্বতন্ত্র মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বের কারণে সেটা সম্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল নারী সত্তার জাগরণের কথাই উঠে এসেছে। এসব বিচারে উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল বক্তব্যের সম্পূর্ণ প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি।
প্রশ্ন ৩ প্রায় এক বছর হলো বাজিতপুর নিবাসী কেরামত আলীর ছোট মেয়ে বিজলীর সাথে মনোহরপুর গ্রামের হোসেন মিয়ার একমাত্র ছেলে হাশিমের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই হাশিমের পরিবার বিজলীর উপর অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করেছে। বিজলীর অপরাধ— বিয়ের সময় তার বাবা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যৌতুকের সমস্ত টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। তাই বিজলীকে নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে এ নির্যাতন । কি. কে. ১৭ প্রশ্ন নম্ব-1/
ক. ‘কন্সটি’ শব্দের অর্থ কী?
খ. অনুপমের মামার মন কীভাবে নরম হলো?
গ. উদ্দীপকের বিজলীর সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী চরিত্রের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো।
ঘ. যদি অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে হতো, তার পরিণতিও কি
উদ্দীপকের বিজলীর মতো হতো? তোমার মতামত দাও।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক ‘কন্সট’ শব্দের অর্থ নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের ঐকতান
‘অপরিচিতা’ গল্পের তরি অনুপমের মামার কাছে কল্যাণী ও তার পরিবারের প্রশংসা করার ফলে মামার বিয়ের পাত্রী তথা কল্যাণীর পারিবারিক অবস্থা, বংশমর্যাদার ব্যাপারে অনুপমের মামাকে বিশদ বর্ণনা দেয় হরিশ। সেসব কথা শুনে তিনি আশ্বস্ত হলেও কল্যাণীর বয়স বেশি মনে করে বিয়ে নিয়ে দ্বিধাগ্রস্তও হন। কিন্তু হরিশের ছিল নিজের সরস কথা দ্বারা মানুষের মনকে প্রভাবিত করার বিশেষ গুণ। তাই তো পরবর্তীতে তার কাছ থেকে পাত্রীর নির্ভরযোগ্য প্রশংসা বাক্য শুনে মামার মন নরম হয়েছিল।
‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর মাঝে দৃঢ়চেতা ও সাহসী মনোভাব লক্ষ করা যায়।
আলোচ্য গল্পের কল্যাণী বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন নারী। একই সঙ্গে তার পিতা শম্ভুনাথ সেনও দৃঢ়চেতা ও সচেতন মানুষ। পিতা-কন্যা উভয়ের মাঝেই আত্মসম্মানবোধ প্রবল ছিল। তাই তো কল্যাণী বিয়ে ভাঙার পর নারী শিক্ষায় ব্রতী হয়েছিল।
উদ্দীপকের বিজলীর সঙ্গে হাশিমের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই হাশিমের পরিবার যৌতুকের কারণে বিজলীর ওপর নির্যাতন শুরু করে। বিজলী নীরবে এ নির্যাতন সহ্য করতে থাকে। ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর হবু শ্বশুরবাড়ির মানুষেরাও ছিল যৌতুকলোভী ও নীচু মনের অধিকারী। এছাড়াও বরের ব্যক্তিত্বহীনতা উপলব্ধি করতে পেরে কল্যাণীর পিতা এ বিয়ে ভেঙে দেন । আত্মসম্মানে বলীয়ান কল্যাণীও পিতার সিদ্ধান্তে দ্বিমত করেনি। বরের পরিবারের মানসিকতার দিক দিয়ে বিজলী ও কল্যাণীর মাঝে সাদৃশ্য ফুটে উঠলেও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি বিজলীর সঙ্গে কল্যাণীর বৈসাদৃশ্য তুলে ধরেছে।
মা অনুপমের সঙ্গে কল্যাণীর বিয়ের পর তার পরিস্থিতি উদ্দীপকের বিজলীর মতো হলেও কল্যাণী ওই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসত | বলে আমি মনে করি। ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী আত্মসম্মানে বলীয়ান এক নারী। তার সঙ্গে ঘটা অন্যায়কে প্রতিহত করার দৃঢ়তা তার রয়েছে। বিয়ের দিনে তার পিতা বিয়ে ভেঙে দেওয়ার পর সে দেশসেবায় নিয়োজিত হয়েছে।
পুনরায় বিয়ে করে নিজেকে মাতৃ-আজ্ঞা থেকে দূরে সরিয়ে রাখেনি। উদ্দীপকের বিজলীর সঙ্গে হাশিমের বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার পরিবার বিজলীর ওপর অত্যাচার করতে থাকে। অত্যাচারের কারণ হলো যৌতুকের টাকা পরিশোধ না করা। এ অত্যাচার বিজলী নীরবে সহ্য করতে থাকে। অন্যদিকে আলোচ্য গল্পের কল্যাণীর হবু বরের পরিবারও ছিল যৌতুকলোভী। এ কারণে কল্যাণীর পিতা দৃঢ়তার সাথে বিয়ের সম্বন্ধটি ভেঙে দিয়েছিল। অনুপমের সঙ্গে কল্যাণীর বিয়ে যদি হয়ে যেত, নিঃসন্দেহে সেও বিজলীর ন্যায় নির্যাতনের শিকার হতো। কেননা অনুপমের পরিবারও ছিল যৌতুকলোভী ও নীচু মনের অধিকারী। কিন্তু কল্যাণী ছিল দৃঢ়চেতা প্রতিবাদী নারী। সে অনুপমের পরিবারের নিপীড়ন থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা অবশ্যই করত।
কল্যাণীর মাঝে ফুটে ওঠা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এটাই নিশ্চিত করে, সে বিজলীর ন্যায় নীরবে অত্যাচার সহ্য করত না। আত্মসম্মানের শক্তি নিয়ে একসময় সে ওই অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতই। তাই বলা যায়, অনুপমের সঙ্গে কল্যাণীর বিয়ে হলে তার পরিণতি বিজলীর পরিণতির দিকে মোড় নিলেও তা থেকে নিজেকে মুক্ত করত কল্যাণী।