প্র: ‘কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন, মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গিয়াছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে। মেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয়া গিয়াছে বটে, কিন্তু পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনো তাহার চেয়ে কিঞ্চিত উপরে আছে, সেই জন্যই তাড়া।’ চ. কে. ১৭। –
ক. কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য কাকে পাঠাে
খ. অনুপমের মামা সেকরাকে বিয়ে বাড়িতে এনেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের কন্যার বাপের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাচিত্র ‘অপরিচিতা’ গল্পের খণ্ডাংশের প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র কথাটির যথার্থতা বিচার করো।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য অনুপমের পিসতুতো ভাই বিন্দাদাকে পাঠানো হয়েছিল। অনুপমের মামা যৌতুকলোভী ও হীন মানসিকতার মানুষ হওয়ায় বিয়ের গয়না পরীক্ষা করতে সেকরাকে বিয়ে বাড়িতে এনেছিল। কল্যাণীর বিয়েতে তার বাবা শম্ভুনাথ সেন নগদ পণের সঙ্গে গয়না দিতে চান। অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনের কথায় আস্থাশীল ছিলেন না। কন্যাপক্ষ যে গয়না দেবে তা আসল না নকল সেটি পরীক্ষা করার জন্য অনুপমের মামা বিয়ে বাড়িতে সেকরাকে সঙ্গে এনেছিল। সেকরা সমস্ত
পয়নার ঘাঁটিত্ব প্রমাণ করেন। উদ্দীপকে কন্যার বিয়ের প্রতি তার বাবার উদাসীনতার সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার সাদৃশ্য রয়েছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মামা যৌতুকলোভী চরিত্র তিনি অনুপমের বিয়ের জন্য একটি যুতসই ঘর খুঁজছিলেন। অর্থাৎ যেখানে না চাইলেও অনেক টাকা যৌতুক পাওয়া যাবে এমন জায়গাতেই মামা অনুপমকে বিয়ে দিতে চান। এজন্য অনুপমের বিয়ের জন্য মামার মাঝে কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো পরিলক্ষিত হয় না।
উদ্দীপকে কন্যার বাবার মাঝে কন্যার বিয়ের প্রতি কোনোপ্রকার তাড়াহুড়ো দেখা যায় না।
কন্যার বয়স অবৈধ রকমে বেড়ে গেলেও তিনি কন্যার বিয়ে সম্পর্কে ছিলেন নির্বিকার। এতে কন্যার বাবার মাঝে কন্যার বিয়ের বিষয় উদাসীন মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। কন্যার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়ায়। পাত্রের বাবা যেখানে বিয়ের জন্য তাড়াহুড়ো করছেন সেখানে কন্যার বাবা ছিলেন স্বাভাবিক। আর সন্তানের বিয়ের বিষয়ে কন্যার বাবার এই মানসিকতা তাকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার সাথে সাদৃশ্যময় করে তুলেছে। উদ্দীপকের ঘটনাচিত্রে ‘অপরিচিতা’ গল্পের যৌতুক প্রথার মতো সামাজিক অসঙ্গতির দিকটি ফুটে উঠলেও যৌতুকের বিরুদ্ধে সম্মিলিত
প্রতিরোধের দিকটি অনুপস্থিত।
আলোচ্য গল্পে অনুপমের মামা চরিত্রের মাধ্যমে যৌতুকের মতো ঘৃণ্য সামাজিক প্রথার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। অনুপমের মামা কন্যার বাবার দেওয়া গয়না যাচাই করার জন্য বিয়ে বাড়িতে সেকরাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এতে কন্যার বাবা শম্ভুনাথ সেন অপমানিত বোধ করেন এবং কল্যাণীর সঙ্গে অনুপমের বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। কল্যাণীও বাবার এ মতকে সমর্থন করে।
উদ্দীপকে যৌতুক প্রথার একটি দিক উপস্থাপিত হয়েছে, যেখানে বিয়ে প্রসঙ্গে মেয়ের বাবার চেয়ে বরের বাবার তাড়া বেশি দেখা যায়। কেননা মেয়ের বয়স বেশি হওয়ায় যৌতুকের টাকার পরিমাণও বেশি। উদ্দীপকে উল্লেখিত বরের বাবার এ অর্থলোভী মানসিকতা ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার সঙ্গে মিলে যায়।
‘অপরিচিতা’ গল্প ও উদ্দীপকে যৌতুক প্রথার মতো সামাজিক ব্যাধির বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। তবে আলোচ্য গল্পে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে বাবা ও মেয়ের সম্মিলিত প্রতিরোধের প্রসঙ্গ এসেছে। ফলে অনুপমের সঙ্গে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে যায় এবং পরবর্তীতে কল্যাণী মেয়েদের শিক্ষাদানের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করে। এছাড়া গল্পের প্রতিটি বিষয় নাটকীয় আবহের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা উদ্দীপকে দেখা যায় না। অতএব বলতে পারি, যৌতুক প্রথার মতো মিল থাকলেও উদ্দীপকের ঘটনাচিত্রে ‘অপরিচিতা’ গঞ্জের খণ্ডাংশই প্রতিফলিত হয়েছে। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি
প্রশ্ন-৫ নিঝুম আর অহনা পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবাসে। তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়। কিন্তু নিঝুমের পরিবার সেটা মেনে নেয় না। কারণ, নিঝুম শিক্ষিত এবং ধনী পরিবারের একমাত্র সন্তান। অপরদিকে, অহনার পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। নিঝুম পরিবারের সম্মতিতে অন্যত্র বিয়ে করে এবং একসময় অহনাকে ভুলে যায়। অহনার দিন কাটে কষ্টের সমুদ্রে। কারণ, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো মরে না।
ক. বিবাহ ভাঙার পর হতে কল্যাণী কোন ব্রত গ্রহণ করেছে? খ. ‘আমার ভাগ্যে প্রজাপতির সঙ্গে পঞ্চশরের কোনো বিরোধ নাই’- বাক্যটির তাৎপর্য কী? গ. উদ্দীপকের নিঝুমের সঙ্গে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের কী
বৈসাদৃশ্য রয়েছে লেখো । ‘উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম-কল্যাণীর জীবনের
বিপরীত প্রতিচ্ছবি” – মূল্যায়ন করো। বিবাহ ভাঙার পর থেকে কল্যাণী মেয়েদের শিক্ষা ব্রত গ্রহণ করেছে।
প্রশ্নোক্ত বাক্যটিতে অনুপমের ভাগ্যের সুপ্রসন্নতার কথা বলা হয়েছে। অনুপমের বিবাহের জন্যে কন্যাকে আশীর্বাদ করতে তার পিসতুতো ভাই বিনুকে পাঠানো হলো। সে ফিরে এসে কন্যার প্রশংসা করে। বিনু খুবই রুচিশীল মানুষ, সে অল্প কথায় অনেক অর্থ প্রকাশ করে। সে যখন বলে খাঁটি সোনা, তখন অনুপমের বুঝতে বাকি থাকে না যে তার জন্যে যে পাত্রী পছন্দ করা হয়েছে সে অনন্যা গুণসম্পন্না নারী। তার ভাগ্যে বিবাহের দেবতা প্রজাপতি ও প্রেমের দেবতা মদনের শুভদৃষ্টি পড়েছে। উভয় দেবতার মধ্যে কোনো রকম আশীর্বাদের বিরোধ নেই।
গ ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মাঝে স্বার্থহীন ভালোবাসার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, যা তাকে উদ্দীপকের নিঝুমের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ করেছে অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম পরিবারতন্ত্রের কারণে না দেখা মানসপ্রতিমা কল্যাণীকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে পারে না। কল্যাণীকে সে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে। প্রথম জীবনে পৌরুষের ঘাটতি তার চরিত্রে থাকলেও পরবর্তীতে মা ও মাতুলের বাধা উপেক্ষা করে কল্যাণীর পাশে থেকে তার জীবনের ভুল ও পাপের প্রায়শ্চিত করতে সচেষ্ট হয়েছে।
উদ্দীপকের নিঝুম পরিবারের বাধায় তার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেনি। তার ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যায়। নিঝুমের অহনার প্রতি ভালোবাসার গভীরতার ক্ষেত্রে ঘাটতি লক্ষ করা যায়। প্রেম মানুষের হৃদয়বৃত্তির এক মহত্তম উপাদান। প্রেমশূন্য মানুষ হৃদয়হীন। অথবা স্বার্থের দিক বিবেচনা করে যেসব মানুষ ভালোবাসার মানুষকে উপেক্ষা করে তারা অমানবিক। ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম হৃদয়বান প্রেমিক পুরুষ আর উদ্দীপকের নিঝুম তার থেকে ভিন্ন চরিত্রের মানুষ।