in

উদ্দীপকের ‘ফসল’ শব্দটি ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে উল্লেখিত ‘ধনবৃদ্ধি’ বিষয়টির সঙ্গে তুলনীয়।

“বিড়াল’ রচনায় কমলাকান্তের মতে, ‘সামাজিক ধনবৃদ্ধি ব্যতীত সমাজের উন্নতি নাই।’ কিন্তু বিড়াল এ প্রসঙ্গে বলেছে, ‘আমি যদি খাইতে না পাইলাম, তবে সমাজের উন্নতি লইয়া কী করিব?’ বিড়ালের এ মন্তব্যে একটি বিষয় পরিষ্কার, তা হলো— সমাজে ধনসম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও তা যদি অল্প কিছু মানুষের মধ্যেই কুক্ষিগত থাকে, তাহলে সে সম্পদ দিয়ে দরিদ্রের কী লাভ? এজন্যেই বিড়াল দ্বিধাহীনভাবে বলেছে, ‘সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধনবৃদ্ধি। ধনীর ধনবৃদ্ধি না হইলে দরিদ্রের কী ক্ষতি? উদ্দীপকে সমাজের ধনবৃদ্ধি সম্পর্কে বিড়ালের মনোভাবের বাস্তব প্রতিফলন লক্ষণীয়।

মতলবপুর গ্রামে সম্পদ, ফসলের প্রাচুর্য থাকলেও তা কুক্ষিগত হয়ে আছে কয়েকজন ভূস্বামীর হাতে। তাই অর্ধাহারে, অশিক্ষায় আর চিকিৎসাহীনতায় মানবেতর জীবনযাপন করে মতলবপুর গ্রামের আশি ভাগ মানুষ। বাইরে থেকে দেখলে যে গ্রামকে আদর্শ বলে মনে হয়, গভীরভাবে দেখলে সেখানে গ্রামবাসীর অসহায়ত্বই কেবল ফুটে ওঠে। উদ্দীপকের ফসল যেমন মুষ্টিমেয় ভূস্বামীর তেমনি ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে উল্লিখিত সিংহভাগ ধন হলো ধনীদের। আর এদিক থেকেই উদ্দীপকের ফসল আর ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের ধনিকশ্রেণির ধনবৃদ্ধির দিকটি তুলনীয়।

ঘ “উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের আংশিক বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে”– মন্তব্যটি যথার্থ। ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, দরিদ্রের বর্ণনা, সমাজের
অরাজকতায় ধনীর দায়িত্ব ইত্যাদি নানা বিষয় বিড়ালের সোশিয়ালিস্টিক
মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। আর উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে
এসব বিষয়ের আংশিক দিক মাত্র ।

উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে সমাজের সমস্ত সম্পদ মুষ্টিমেয় মানুষের অধিকারে থাকায় কীভাবে অধিকাংশ মানুষ বিত্তহীন হয়ে পড়ছে। ব্যর্থ হচ্ছে বেঁচে থাকার জন্যে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সংগ্রহ করতে গ্রামের সিংহভাগ মানুষ হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে ফসল ফলালেও তারাই অর্ধাহারে, অশিক্ষায় দিনাতিপাত করে। অবস্থা এমন যে, সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকু পর্যন্ত পায় না । এই পরিস্থিতি আলোচ্য ‘বিড়াল’ রচনার একটি দিক মাত্র। ‘বিড়াল’ রচনায় বিড়াল ও কমলাকান্তের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে সমাজ- সত্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচিত হয়েছে।

‘বিড়াল’ রচনায় সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য সম্পর্কে বিস্তৃত বিষয় বর্ণিত হয়েছে। বিড়ালের মতে, বৈষম্যের কারণে সমাজে যাবতীয় অরাজকতার সৃষ্টি। ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললেও দরিদ্রের দিকে মুখ তুলে তাকায় না। ফলে দরিদ্ররা হতদরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্যে বাধ্য হচ্ছে চুরি করতে। বস্তুত এসব কথা বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর বর্ণিত, নিষ্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনা সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণিত হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে এর একটি দিক। সার্বিক দিক বিবেচনায় তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

প্রশ্ন ৭ আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের এমএ ক্লাসের ছাত্র। সমাজের কল্যাণ করতে সে পছন্দ করে। একবার তার এলাকায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। এতে গ্রামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। খাদ্য আর চিকিৎসার অভাবে সাধারণ মানুষ নানারকম দুর্ভোগে পড়ে। সাধারণ মানুষের কষ্টে আজিজের প্রাণ কেঁদে ওঠে। মানুষের এমন পরিণতি সে মেনে নিতে পারেনি। তাই সে বন্ধুদের নিয়ে বন্যার্ত মানুষের পাশে এসে
বি. বো. ১৬। প্রশ্ন নম্বর- 2/
ক. ‘মার্কার’ শব্দের অর্থ কী?

খ. পরোপকারই পরম ধর্ম – ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আজিজের পরোপকারের মাঝে ‘বিড়াল’ রচনায় প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকটির ভাবের সাথে ‘বিড়াল’ রচনার আংশিক দিক প্রতিফলিত হয়েছে— আলোচনা করো।
8
৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
| ‘মার্জার’ শব্দের অর্থ— বিড়াল।
| ‘পরোপকারই পরম ধর্ম’ কথাটিতে ধর্ম সম্পর্কে বিড়ালের অভিমত প্রকাশিত হয়েছে।
নিজের জন্যে রাখা দুধ বিড়াল পান করলে কমলাকান্ত বিড়ালকে প্রহার করতে গিয়েও পুনরায় শয্যায় ফিরে আসে।

তখন বিড়াল কমলাকান্তকে বলে, ‘এই দুগ্ধটুকু পান করিয়া আমার পরম উপকার হইয়াছে। তোমার আহরিত দুগ্ধে এই পরোপকার সিদ্ধ হলো— অতএব তুমি সেই পরম ধর্মের ফলভাগী। কারণ বিড়ালের মতে, ‘পরোপকারই পরম ধর্ম।’ বস্তুত প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে মানবতাবাদী লেখকের নৈতিক দর্শন প্রকাশ পেয়েছে। এর দ্বারা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, অন্যের উপকারই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বিড়াল’ রচনায় পরোপকার সম্পর্কে বিড়াল যে মন্তব্য করেছে, উদ্দীপকের আজিজের পরোপকারের মাঝে তার প্রতিফলন দেখা যায়। ‘বিড়াল’ রচনায় লেখক বিড়ালের ভাষ্যে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির দুঃখ-দুর্দশা নিপীড়ন, নিষ্পেষণ ও বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তুলে ধরেছেন আত্মোপলন্ধিজাত নৈতিক দর্শন। উদ্দীপকের ঘটনাবর্তে আজিজের কর্মকাণ্ডে তার নৈতিক চেতনার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

পাশাপাশি লেখক সেখানে তাঁর আত্মোপলব্ধিজাত নৈতিক দর্শন এবং যেখানে বিড়ালের স্বগতোক্তিতে লেখকের ভাষ্য- পরোপকারই পরম ধর্ম। কেননা সুস্থ’বিড়াল’ রচনায় ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূরীকরণের প্রত্যাশা উচ্চকিত হয়েছে। মানুষকে সেবার মাধ্যমে যে পরোপকার সাধিত হয় তার চেয়ে আর বড় ধৰ্ম নেই। উদ্দীপকের আজিজের মাঝেও সেই পরম ধর্মাচারের প্রতিফলন লক্ষিত হয়।

উচ্চশিক্ষিত আজিজ জনমানুষের কল্যাণে কাজ করতে পছন্দ করে। বন্যায় গ্রামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলে সে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে। বন্ধুদের নিয়ে বন্যার্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। বস্তুত ‘বিড়াল’ রচনায় বিধৃত লেখকের মানবিক ভাবনাই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই আজিজের জনকল্যাণমূলক কাজে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বিড়াল

কর্তৃক বিবৃত পরোপকার সম্পর্কিত বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যায় । ঘ উদ্দীপকটির ভাবে ‘বিড়াল’ রচনার আংশিক দিক প্রতিফলিত হয়েছে—
মন্তব্যটি যথার্থ। “বিড়াল’ রচনায় বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনার পাশাপাশি পরোপকারের মহত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে।

কিন্তু উদ্দীপকে কেবল পরোপকারের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।
‘বিড়াল’ রচনায় যে ন্যায়বাদ ও পরোপকারের কথা বলা হয়েছে, উদ্দীপকের ঘটনাবর্তে তারই প্রতিফলন লক্ষিত হয়। সেখানে সমাজকল্যাণের ছাত্র আজিজ মানবিক দিক বিবেচনায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্ধুদের সাথে নিয়ে তাদের সেবা করেছে। আজিজের সেবাপরায়ণ মানসিকতার জয়গান ধ্বনিত হয়েছে সোশিয়ালিস্টিক বিড়ালের কণ্ঠেও। বিড়ালের মতে, পরোপকারই পরম ধর্ম।

What do you think?

Written by Selfish World

Leave a Reply

turkey bacon bad for dogs

Turkey bacon: is it good for pets?

‘বিড়াল’ রচনায় সাম্যবাদবিমুখ, ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষে শোষক-শোষিত