উদ্দীপকটিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম কল্যাণীর জীবনের মাঝে গভীর ভালোবাসা না থাকলেও কল্যাণীর প্রতি অনুপমের শ্রদ্ধাবোধ লক্ষ করা যায়। সমাজে বসবাসরত নর-নারীর ভেতরে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। ওই সম্পর্ককে সামাজিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে স্বীকৃতি দেওয়া মানুষের মানবিক দায়িত্ব, তা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
উদ্দীপকে ভালোবাসার সম্পর্কের অবমাননা করা হয়েছে আর ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর প্রতি অনুপমের প্রগাঢ় ভালোবাসার অকপট স্বীকৃতি বর্ণিত হয়েছে। উদ্দীপকে নিঝুম ও অহনা পরস্পরকে ভালোবাসলেও আর্থিক ও সামাজিক কারণে নিঝুমের পরিবার বধূ হিসাবে অহনাকে ঘরে তোলেনি।
নিঝুম পরিবারের মতে অন্যত্র বিয়ে করে অহনার ভালোবাসাকে অবহেলা করেছে। আর অহনার ভালোবাসা নিঝুমের প্রতি নিখান হওয়ায় সে কষ্টের সমুদ্রে ভাসতে থাকে। আর ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপম-কল্যাণীর জীবনচিত্র ভিন্ন মাত্রিকতা লাভে ধন্য হতে দেখা যায় ।
‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপম-কল্যাণীর যৌতুকের কারণে সামাজিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটেছে। কনের সাথে প্রথমে অনুপমের পরিচয় বা দেখা না হলেও ওই অপরিচিতা মানুষকে অনুপম হৃদয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। তাকে না দেখার বা না পাওয়ার বেদনা অনুপমের জীবনে ভীষণ পরিবর্তন এনেছে।
এক পর্যায়ে কানপুরের পথে কল্যাণীর সাথে অনুপমের সাক্ষাৎ ঘটেছে। তারপর কল্যাণীর সেবাব্রতে মুগ্ধ হয়ে সে কল্যাণীর পাশে অবস্থান নিয়েছে। অনুপম কল্যাণীর মনে ভালোবাসার আসন লাভ করেছে। অথচ উদ্দীপকে নিঝুমের অহনার প্রতি বিরূপ আচরণ সত্যিই দুঃখজনক যা ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম-কল্যাণীর জীবনের বিপরীত চিত্র ধারণ করেছে। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলা যায়।
প্রশ্ন ৬ কারো ঘর ভাঙে ঝড়ে
কারো সংসার পুড়ে যায় যৌতুকের আগুনে।
কেউ করে হায় হায়, বাপ-মা কাঁদে
মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়-পড়ে যৌতুকের করবে না বিয়ে সোনালি নিজেকে করে পণ্য
এটা তার পণ সোনালি জীবনের জন্য। এবং বেং ১৭৪ প্রশ্ন নম্বর-১/
ক. ‘অপরিচিতা’ গল্পে কন্যাকে কী দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছিল? ১
খ. ‘কিন্তু ভাগ্য আমার ভালো, এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি’— বক্তার এমন অনুভূতির কারণ বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকের ‘সোনালি’ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চরিত্রকে ইঙ্গিত করে? বর্ণনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে নিহিত সামাজিক কাঠামো এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের সামাজিক পটভূমি সাদৃশ্যযুক্ত” — যুক্তিসহ মন্তব্যটি যাচাই করো।
| ‘অপরিচিতা’ গল্পে কন্যাকে এয়ারিং দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছিল। | প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা অনুপম কল্যাণীর কাছাকাছি থাকা বলতে হৃদয়ে জায়গা পাওয়ার কথা বুঝিয়েছে। কানপুরে পৌঁছে কল্যাণীর পরিচয় জানতে পেরে অনুপমের হৃদয় আবারো কল্যাণীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়। সে কল্যাণীকে বিয়ে করতে চাইলেও কল্যাণী রাজি হয় না। কল্যাণীর কাছাকাছি থাকার জন্য সে কানপুরেই বসবাস করতে শুরু করে। সুযোগ পেলেই সে কল্যাণীর কাজে সাহায্য করে আর মনে করে হয়তো এভাবেই সে কল্যাণীর হৃদয়ে স্থান পেয়েছে।
ন ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও দৃঢ়চেতা এক নারী চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা উদ্দীপকের সোনালির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আলোচ্য গল্পের কল্যাণী আত্মমর্যাদায় বলীয়ান একজন নারী। সামাজিক রীতিনীতির চেয়ে আত্মসম্মানই তার কাছে বড়। আর তাই তো বাবার কথায় লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার লৌকিকতাকে অগ্রাহ্য করে সে এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। নিজেকে নিয়োজিত করেছে মাতৃ-আজ্ঞা তথা দেশসেবায় ।
উদ্দীপকে যৌতুক প্রথার কারণে সংসার ভাঙার কথা বলা হয়েছে। একইসাথে যৌতুকের কাছে কন্যার পিতামাতার অসহায়ত্নের দিকটিও স্পষ্ট। কিন্তু সোনালি নামের মেয়েটি নিজেকে যৌতুক প্রথার কাছে সমর্পণ করবে না। জীবনকে সুন্দরভাবে সামনে এগিয়ে নিতে সে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এদিকে আলোচ্য গল্পের কল্যাণীও তাই। অনুপমের মামার যৌতুকলোভী আচরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল সে। যৌতুক প্রথা সংশ্লিষ্ট তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে পরবর্তীতে সে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশসেবায় মগ্ন হয়েছিল।
‘অপরিচিতা’ গল্পের কাহিনি মূলত যৌতুক প্রথা ও এর বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে যৌতুক প্রথার ঘৃণ্য রূপটি ফুটে উঠেছে। এ প্রথা নারীকে পণ্য ও বিয়ে ব্যাপারটিকে বেচা-কেনার সম্পর্কে পরিণত করেছে। যৌতুকের লোভ যে মানুষের মানসিকতাকে কতটা হীন করে দিতে পারে
তার প্রমাণ হলো অনুপমের মামার আচরণ ।
উদ্দীপকে যৌতুকের কারণে সংসার ভাঙার কথা বলা হয়েছে। কন্যার বাবা- মায়েরা মেয়ের সুখ-চিন্তা করে বরপক্ষের যৌতুকের দাবি মেনে নেয়। ‘অপরিচিতা’ গল্পেও যৌতুকের এই দিকটি স্পষ্ট। অনুপমের মামা কন্যার গহনা যাচাই করার জন্য সেকরা সাথে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর এই আচরণ তাঁর যৌতুকলোভী মানসিকতাকে সবার সামনে উন্মুক্ত করেছে। অনুপমের মামার কাছেও কল্যাণী পণ্যের মতো ছিল আর তাই তো তার মাঝে ছিল দামে ঠকে না যাওয়ার নির্লজ্জ মানসিকতা। তাঁর আচরণের কারণে অনুপম কল্যাণীর বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে যায়। এমনিভাবে ভেঙে যায় অনেক বৈবাহিক সম্পর্কও যার কথা উদ্দীপকে বলা হয়েছে।
উদ্দীপক ও আলোচ্য গল্পের সামাজিক কাঠামোর সাদৃশ্য এখানেই যে, উভয়ক্ষেত্রেই সম্পর্কের গুরুত্বের চেয়ে যৌতুক প্রথার প্রভাব বেশি। উদ্দীপকে নিহিত সামাজিক কাঠামো ও আলোচ্য গল্পের সামাজিক কাঠামো একই। উভয়ক্ষেত্রেই অমানবিক যৌতুক প্রথার প্রভাব বিদ্যমান। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।
প্রশ্নঃ ৭] ডাক্তার অপূর্ব রংপুর বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলেন একটি স্কুল বাসে একজন শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের ছড়া গান শেখাতে শেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষিকাকে তার চেনা চেনা মনে হলো। তার সঙ্গেই কি অপূর্বের বিয়ে হবার কথা ছিল? অপূর্বের কৌতূহল আর কোলাহলের মধ্যেই বাসটি চলে গেল। শিক্ষিকাকে দেখে মনে হলো স্বাধীনচেতা ও ব্যক্তিত্বময়ী। ডাক্তার অপূর্বের মনে পড়ল সেই বিখ্যাত গানের কলি: আমার বলার কিছু ছিল না, ……….. বি.কে. ১৭। প্রশ্ন ন-2/
ক. ‘অপরিচিতা’ গল্পে কাকে গজাননের ছোট ভাই বলা হয়েছে? ১ খ. “ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই”- উক্তিটি কোন প্রসঙ্গে করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. ডাক্তার অপূর্ব এবং ‘অপিরিচিতা’ গল্পের অনুপম যেদিক থেকে
সাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকের শিক্ষিকার মধ্যে ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর চারিত্রিক প্রবণতাসমূহ যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বলে তুমি মনে করো কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
‘অপরিচিতা’ গল্পে ব্যাঙ্গার্থে অনুপমকে গজাননের ছোট ভাই বলা
হয়েছে।